1. desherchitrabd@gmail.com : Desher DesherChitra : Desher Chitra
রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা: চিকিৎসক বাংলাদেশ পুলিশের দুর্নীতি: নতুন সরকারের দায়িত্ব ও জনমতের চাপ মৌলভীবাজারে লাইফলাইন হাসপাতালে অনিয়ম ও অবহেলার অভিযোগ ছাত্রদলের কমিটি গঠনে ২০ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগ দক্ষিণ সুরমায় সাংবাদিকের বাসায় হামলা: ভাঙচুর, মারধর ও লুটপাট লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাচ্ছেন ডা. জুবাইদা খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন কি না—চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চিকিৎসকদের: মির্জা ফখরুল বাংলাদেশে কারও নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই,তারেক রহমানের ফেরাকে ঘিরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আশ্বাস জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপিতে যোগদানের ঢল: মির্জা ফখরুল ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে কেন্দ্র করে যুবদল নেতাকে মারধরের অভিযোগ, কাঠগড়ায় সিআইডি কর্মকর্তা

অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানে যাওয়া কি জায়েজ ?

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ধর্ম

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। একসাথে বাস করতে গেলে পারস্পরিক সম্পর্ক, সহনশীলতা এবং সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। মুসলিম সমাজ নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষের সঙ্গে বসবাস করে। এ অবস্থায় অনেক সময় সামনে আসে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—অন্য ধর্মের অনুষ্ঠান, উৎসব বা আচার-অনুষ্ঠানে মুসলিমদের অংশগ্রহণ করা কি ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে অনুমোদিত বা জায়েজ?

এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমাদের দেখতে হবে কুরআন-হাদীস, ইসলামি ফিকহ, এবং সমকালীন আলেমদের মতামত। পাশাপাশি মানবিক সম্পর্ক ও সামাজিক বাস্তবতাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।

ইসলামের মূলনীতি

ইসলাম সর্বজনীন ও সার্বিক জীবনব্যবস্থা। এটি শুধু ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষের সামাজিক, পারিবারিক ও রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা দিয়েছে। ইসলামের মূলনীতি হলো—

  1. আকীদাহর পবিত্রতা রক্ষা
    মুসলিমের প্রথম দায়িত্ব হলো আল্লাহর একত্ববাদ ও মুহাম্মদ ﷺ-কে শেষ নবী হিসেবে মান্য করা। তাই এমন কোনো কাজে অংশগ্রহণ করা যাবে না, যা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে শিরক, কুফর বা ভ্রান্ত বিশ্বাসকে সমর্থন করে।
  2. অন্যের ধর্ম নিয়ে কটূক্তি নয়
    কুরআনে আল্লাহ বলেন:

“তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের তারা ডাকে, তাদের গালি দিও না, ফলে তারা অজ্ঞতার কারণে আল্লাহকে গালি দিবে।”
(সূরা আল-আন‘আম: ১০৮)

অর্থাৎ অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শিষ্টাচার বজায় রাখতে হবে।

  1. মানবিক ও সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা
    ইসলাম মুসলিমদেরকে অমুসলিম প্রতিবেশী, আত্মীয় কিংবা সহকর্মীর সঙ্গে সদাচরণ করতে নির্দেশ দিয়েছে। আল্লাহ বলেন:

“আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না তাদের সঙ্গে সদাচরণ করতে, যারা ধর্মের কারণে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়নি।”
(সূরা আল-মুমতাহিনা: ৮)

অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ধরন

অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানে মুসলিমদের যাওয়া বিভিন্ন দিক থেকে ভিন্ন হতে পারে।

১. ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সরাসরি অংশগ্রহণ

যেমন পূজা, মূর্তির সামনে প্রণাম, হিন্দু মন্দিরে আরতি, বা খ্রিস্টানদের গির্জায় ইবাদত প্রার্থনায় অংশ নেওয়া।

  • ফিকহবিদদের অভিমত: এটি হারাম। কারণ এতে অন্য ধর্মের ইবাদতে অংশগ্রহণ হয়, যা ইসলামের মৌলিক আকীদাহর বিরোধী।
  • এখানে উপস্থিতি মানেই একধরনের সমর্থন বা অংশগ্রহণ হিসেবে ধরা হয়।

২. সামাজিক বা সাংস্কৃতিক দিক থেকে উপস্থিত হওয়া

যেমন – প্রতিবেশীর বিয়েতে যাওয়া, আত্মীয়ের কোনো দাওয়াতে অংশ নেওয়া, বা সহকর্মীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া যেখানে কোনো ধর্মীয় আচার নেই।

  • এ ক্ষেত্রে অনুমোদন রয়েছে, যদি কোনো প্রকার শিরকি বা কুফরি কাজে অংশগ্রহণ না করা হয়।
  • কারণ এতে মানবিক সম্পর্ক রক্ষা হয় এবং সহাবস্থান সহজ হয়।

৩. শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো

অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবে সরাসরি অভিনন্দন দেওয়া নিয়ে ফকীহদের মধ্যে মতভেদ আছে।

  • অনেকে বলেন এটি জায়েজ নয়, কারণ এতে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসকে সমর্থন করার সম্ভাবনা থাকে।
  • আবার অনেকে মানবিক সৌজন্যের কারণে সীমিত পর্যায়ে “শুভ কামনা” জানানোকে জায়েজ বলেছেন, তবে স্পষ্টভাবে ধর্মীয় রীতিকে স্বীকৃতি দেওয়া যাবে না।

ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত

রাসূল ﷺ মক্কা ও মদীনা সমাজে ইহুদি-খ্রিস্টানদের সঙ্গে সহাবস্থান করেছেন।

  • মদীনার সংবিধানে অমুসলিমদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছিল।
  • তবে রাসূল ﷺ কখনো তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেননি বা সমর্থন করেননি।
  • তিনি সবসময় ইসলাম ও তাওহীদের বিশুদ্ধতা বজায় রেখেছেন।

আধুনিক প্রেক্ষাপট

আজকের বহুজাতিক, বহুসাংস্কৃতিক বিশ্বে মুসলিমদের অমুসলিম বন্ধু, সহকর্মী, এমনকি আত্মীয়ও থাকতে পারে। ফলে সামাজিকভাবে অনেক সময় এমন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ আসা স্বাভাবিক।

  • যদি এটি সম্পূর্ণ ধর্মীয় আচারভিত্তিক হয়, তবে উপস্থিত হওয়া উচিত নয়।
  • কিন্তু যদি এটি সামাজিক প্রকৃতির হয় (যেমন বিয়ের দাওয়াত, জন্মদিন, কনফারেন্স ইত্যাদি), তবে ইসলামী শিষ্টাচার বজায় রেখে অংশগ্রহণ করা যেতে পারে।
  • সব ক্ষেত্রে নিজের আকীদাহ স্পষ্টভাবে ধরে রাখা আবশ্যক।

কিছু বাস্তব দিকনির্দেশনা

  1. আমন্ত্রণ পেলে প্রথমে যাচাই করুন অনুষ্ঠানটি ধর্মীয় না সামাজিক।
  2. ধর্মীয় হলে বিনয়ের সঙ্গে দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করুন।
  3. সামাজিক হলে অংশ নিন, তবে নিজেকে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখুন।
  4. শুভেচ্ছা জানাতে হলে এমন শব্দ ব্যবহার করুন যাতে ধর্মীয় স্বীকৃতি বোঝায় না, বরং মানবিক সৌজন্য প্রকাশ পায়।
  5. সর্বদা ইসলামী পরিচয় ও আকীদাহ অক্ষুণ্ণ রাখুন।

অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বিষয়টি সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল। ইসলাম যেমন ভ্রান্ত বিশ্বাসকে সমর্থন করতে দেয় না, তেমনি মানবিক সম্পর্ক ও সহাবস্থানকে অস্বীকারও করে না।

তাই মূল নীতি হলো—

  • আকীদাহর সুরক্ষা সর্বাগ্রে
  • যেখানে শিরক বা কুফরের সংশ্লিষ্টতা আছে, সেখানে যাওয়া যাবে না।
  • কিন্তু মানবিক, সামাজিক কারণে কোনো ধর্মীয় রীতি ছাড়া অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা জায়েজ।

অতএব, মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মেনে চলা, আলেমদের পরামর্শ নেওয়া, এবং প্রতিটি পরিস্থিতি বিচক্ষণতার সঙ্গে মোকাবিলা করা।

Share this Post in Your Social Media

Comments are closed.

এই ধরনের আরও খবর
Copyright © 2025, সাপ্তাহিক দেশের চিত্র. All rights reserved.
Weekly Desher Chitra developed by LogoMyface