নিজস্ব প্রতিবেদক
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসে দেশের দুর্নীতির বর্তমান চিত্র, এর সামাজিক–অর্থনৈতিক প্রভাব এবং বিএনপির নেওয়া পূর্ববর্তী উদ্যোগের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় তিনি এসব মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, দুর্নীতি এখন সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলছে—চাকরির সুযোগে বৈষম্য, কৃষকের সরকারি সেবা পেতে ভোগান্তি, চিকিৎসা নিতে গিয়ে অতিরিক্ত খরচের চাপ কিংবা ব্যবসা চালাতে ঘুষ দিতে বাধ্য হওয়ার ঘটনাই এই সংকটকে স্পষ্ট করে। তাঁর মতে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি, সড়কে নিরাপত্তাহীনতা এবং মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পেছনেও দুর্নীতির গভীর প্রভাব রয়েছে।
বিএনপির অতীত শাসনামলের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান প্রশাসনে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন, যা সরকারি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনে। পরবর্তী সময়ে খালেদা জিয়ার সরকার সরকারি প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়ন, শক্তিশালী আর্থিক আইন, অডিট ব্যবস্থা জোরদার করা এবং প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়া চালুর মাধ্যমে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০০৪ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠন বাংলাদেশের প্রশাসনিক সংস্কারে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। এ সময়ে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এসব উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করে। বিভিন্ন জরিপে জনগণের অভিজ্ঞতাতেও দুর্নীতি হ্রাসের প্রবণতা উঠে আসে বলে জানান তিনি।
তারেক রহমানের বক্তব্য অনুযায়ী, বিএনপির আগের মেয়াদে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে ছিল—মানিলন্ডারিংবিরোধী আইন প্রণয়ন, সরকারি ক্রয়ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, টেলিকম ও বিমান পরিবহন খাতে উন্মুক্ত বাজারনীতি চালু এবং প্রশাসনে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ।
আগামী দিনের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি জানান, রাষ্ট্রের মূল প্রতিষ্ঠান—আদালত, দুদক, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করা, সরকারি খাতে রিয়েল–টাইম অডিট চালু, আধুনিক পুলিশিং ও দ্রুত বিচার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন, সব ধরনের লাইসেন্স ও জমি–সংক্রান্ত সেবা অনলাইনভিত্তিক করা এবং হুইসলব্লোয়ারদের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই বিএনপির লক্ষ্য। পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থায় সততা–বিষয়ক পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা এবং ডিজিটাল পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনাও তুলে ধরেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, দুর্নীতিবিরোধী লড়াই দীর্ঘমেয়াদি ও কঠিন হলেও সৎ নেতৃত্ব ও জনগণের অংশগ্রহণ থাকলে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন সম্ভব। জনগণ আস্থা রাখলে বিএনপি আবারও এ লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত—এমনটাই মন্তব্য করেন তিনি।