শিক্ষাঙ্গন প্রতিবেদক
মিশরের কায়রোয় অবস্থিত আল-আজহার ইউনিভার্সিটি (Al-Azhar University)—বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ ইসলামিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইসলামি জ্ঞান, ফিকহ, ভাষা, বিজ্ঞান ও দর্শনের অনন্য কেন্দ্র এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের বহু দেশের মতো বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর শিক্ষার্থীরা সেখানে পড়তে যান। অনেকেই জানতে চান—বাংলাদেশ থেকে কীভাবে ভর্তি হওয়া যায়? চলুন, জানি বিস্তারিত।
আল-আজহারের পরিচয় সংক্ষেপে
- প্রতিষ্ঠিত: ৯৭০ খ্রিস্টাব্দে (৩৬১ হিজরি)
- অবস্থান: কায়রো, মিশর
- শিক্ষার মূল বিষয়: ইসলামি শরিয়াহ, তাফসির, হাদিস, ফিকহ, উসুল, আরবি ভাষা, পাশাপাশি মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ আধুনিক বিজ্ঞান
- বিশ্বে ইসলামিক স্কলার তৈরির একটি প্রধান প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশ থেকে কীভাবে ভর্তি হওয়া যায়?
১. ভর্তি প্রক্রিয়া
বাংলাদেশে মিশরীয় দূতাবাস (Embassy of Egypt in Dhaka) এর তত্ত্বাবধানে আল-আজহারে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়।
ভর্তি মূলত তিনভাবে হতে পারে:
ক. সরকারি বৃত্তি (Scholarship Route)
- প্রতিবছর বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক স্কলারশিপ বরাদ্দ থাকে।
- এই স্কলারশিপের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ বা মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে আবেদন করা যায়।
- সাধারণত দাখিল/আলিম/ফাযিল পর্যায়ের ফলাফলের ভিত্তিতে মনোনয়ন হয়।
- বৃত্তিপ্রাপ্তদের জন্য আল-আজহার টিউশন ফি মওকুফ, আবাসন ও কিছু বৃত্তি সুবিধা দেওয়া হয়।
খ. নিজ খরচে ভর্তির সুযোগ (Self-financed)
- যারা বৃত্তি না পায়, তারাও সরাসরি ভর্তি হতে পারে।
- ঢাকাস্থ মিশরীয় দূতাবাসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে আবেদন করতে হয়।
- আরবি ভাষা ও ইসলামি জ্ঞানের একটি মৌলিক দক্ষতা থাকতে হয়।
গ. দাওয়াহ বিভাগের (Da’wah Department) মাধ্যমে আবেদন
- বাংলাদেশে আল-আজহারের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন বা প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠনের মাধ্যমেও মাঝে মাঝে সুযোগ মেলে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা:
- আলিম/ফাযিল/আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পায়।
- সাধারণ শিক্ষায় পড়ুয়া (SSC/HSC) শিক্ষার্থীদের জন্যও সুযোগ থাকে, তবে আরবি ভাষা ও ইসলামি বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হয়।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
- পাসপোর্ট
- শিক্ষাগত সনদ (অনূদিত আরবি ভাষায়)
- মেডিকেল সার্টিফিকেট
- সদ্য তোলা ছবি
- গার্ডিয়ান অনুমতিপত্র
- দূতাবাসের অনুমোদন/নো অবজেকশন
ভাষাগত দক্ষতা:
- আল-আজহার মূলত আরবিতে পাঠদান করে। তাই আরবি ভাষায় মৌলিক দক্ষতা থাকা বাধ্যতামূলক।
- কখনও কখনও তারা ভর্তি-পূর্ব আরবি ভাষা কোর্স নিতে বলে।
ভর্তি কবে হয়?
- প্রতিবছর মার্চ-জুনের মধ্যে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
- ক্লাস শুরু হয় সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাসে।
- আবেদনের বিজ্ঞপ্তি সাধারণত ঢাকাস্থ মিশরীয় দূতাবাস ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশ করে।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সুবিধা
- আল-আজহারে পড়ুয়া বাংলাদেশিদের জন্য মিশরে একটি শক্তিশালী কমিউনিটি আছে।
- অনেকেই ইমাম, গবেষক বা ইসলামি স্কলার হিসেবে দেশে-বিদেশে কাজ করছেন।
- আল-আজহারের ডিগ্রির গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বজুড়ে রয়েছে।
আল-আজহার ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া শুধু উচ্চশিক্ষার সুযোগ নয়, বরং বিশ্ব মুসলিম জ্ঞানের কেন্দ্রস্থলে সরাসরি যুক্ত হওয়ার এক ঐতিহাসিক সুযোগ। ইসলামি জ্ঞানকে আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে দিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য এটি এক অনন্য গন্তব্য। আর প্রস্তুতি শুরু করলেই পথ মসৃণ হতে শুরু করে।
Post Views:
32