আশুরা নামের তাৎপর্য : দশ-ই মহররমকে আশুরাও বলা হয়। আশুরা শব্দটির তাৎপর্য এভাবে বর্ণিত হয়েছে- ‘আশুরা’ শব্দটি ছিল ‘আশানুরা’ অর্থাৎ যে ব্যক্তি এ মহান দিনের মর্যাদা রক্ষা করবে সে নূরানি জীবন লাভ করবে। অত:পর ‘আশানুরা’র ‘নুন’ অক্ষরটি বাদ দিয়ে বাক্যটি সহজ করে ‘আশারা’ বা ‘আশুরা’ করা হয়। কারো কারো মতে, এ দিনে আল্লাহ পাক ১০ জন পয়গম্বরকে তাঁর ১০টি অনুগ্রহ ও বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন বলে এদিনকে ‘আশুরা’ বলা হয়।
আশুরা শিক্ষা :
১. কারবালায় মূলত বাতিলের পরাজয় এবং সত্য ও হকপন্থীদের বিজয় ও মুক্তি সূচিত হয়েছে।
২. নবী ও তাঁদের অনুসারীগণের ইতিহাস স্মরণপূর্বক আল্লাহর বিধান পালন ও বাস্তবায়নে অবিচলতা, দৃঢ়তা ও আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা যদি যথার্থমানের হয়, তাহলে এখনো আল্লাহ তা’য়ালা পৃথিবীর সব বাতিল শক্তির মোকাবিলায় মুসলিমদের বিজয়ী করবেন।
৩. ঈমান-আকিদাবিরোধী সব কার্যকলাপ বন্ধ করতে সচেষ্ট হতে হবে।
৪. মুসলিম নামধারী হয়েও যারা ইয়াজিদ, ইবনে জিয়াদ ও সিমারের ভূমিকা পালন করছে তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
৫. ইসলাম সম্পর্কে যারা ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করে তাদেরকে সঠিক ধারণা প্রদান করতে হবে এবং ইসলামের সুমহান আদর্শের দিকে সকলকে আহ্বান জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে নিজেদের কুরআন-হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য নিয়মিত অধ্যয়ন ও চর্চার মাধ্যমে ইসলামের যথার্থ জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে।
৬. সত্য ও ন্যায়কে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে বাতিলের মোকাবিলায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।
৭. আল্লাহর সন্তুষ্টি ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব কাজে ত্যাগ এবং কোরবানির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
৮. সুযোগ থাকার পরও যেমন হুসাইন (রা.)-এর সাথীরা তাকে ছেড়ে না গিয়ে তার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সাথে থেকেছেন তেমনি আমাদেরও উচিত সত্যপন্থীদের সমর্থন, সহযোগিতা ও সাথে থাকা।
৯. ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে সার্বিক সফলতা অর্জনের জন্য নিজেরা নেক আমল করতে হবে, সর্বপর্যায়ে আল্লাহর হুকুম-আহকাম এবং খোদাভীরু নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত শপথ গ্রহণ করতে হবে, অন্যায়ের কাছে মাথা নত করা যাবে না।
১০. সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনে জীবন দিতে হবে। কারণ, ইমাম হোসাইন (রা.) জীবন দিয়েছেন সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য।
আমল : আশুরার দিনে নির্দিষ্ট কোন আমল নেই, তবে হাদীস শরীফে দশ-ই মহররম রোজা পালনের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রমযানের রোজার পরে আল্লাহর নিকট মহররম মাসের রোজা ফজিলতের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠতম’ (সহি মুসলিম : ১/৩৮৮। মহানবী (সা.) আরো বলেন, ‘আমি আল্লাহর দরবারে আশা রাখি যেন ‘আশুরা’র রোজা আল্লাহর নিকট পূর্ববর্তী বছরের গুনাহের কাফফারাস্বরূপ গণ্য হয়’ (তিরমিযী- ১৩২, ইবনে মাজাহ-১২৪। সহি বুখারী ও মুসলিম শরীফে সালামাহ ইবনে আকওয়া (রা.) হতে বর্ণিত আছে, মহানবী (সা.) বনি আসলাম গোত্রের এক লোককে নির্দেশ দিলেন সে যেন লোকদের মাঝে এ ঘোষণা করে দেয়, যে আজ সকালে খেয়েছে সে যেন দিবসের বাকি অংশ রোজ পালন করে, আর যে ব্যক্তি কিছু খায়নি সে যেন রোজা রাখে। কেননা, আজকের এ দিন আশুরার দিন। আশুরার দিনে যেহেতু ইহুদিরাও রোজা রাখে তাই তাদের সাথে পার্থক্য করার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখো এবং এর আগে এক দিন অথবা পরে একদিন রোজ রেখে ইহুদিদের বিরুদ্ধাচরণ করো।’
লেখক : প্রধান ফকীহ, আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদ্রাসা, ফেনী।