ধর্ম প্রতিবেদক
ইসলামি সংস্কৃতিতে ইমাম হলেন সমাজের নৈতিক পথপ্রদর্শক। শুধু নামাজের ইমামতিই নয়,তিনি হয়ে ওঠেন মানুষের বিশ্বাস, শিক্ষা, ও শান্তির প্রতীক। অথচ বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে এই ইমামগণ রয়েছেন অবহেলার শিকার। বেতন অপ্রতুল, সম্মান অনিশ্চিত, এমনকি কোথাও কোথাও ইমাম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
দেশের অধিকাংশ মসজিদে ইমামদের মাসিক বেতন ৩,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা। শহরের কিছু নামকরা মসজিদে বেতন কিছুটা ভালো হলেও, গ্রামীণ ও ছোট মসজিদে ইমামদের অবস্থা করুণ। অনেক সময় শুধু মুসল্লিদের অনুদান বা দানের উপর নির্ভরশীল থেকে জীবন চালাতে হয়। পরিবার নিয়ে এক অস্থির জীবনযাপন করেন তারা।
সম্প্রতি দেশের কয়েকটি জেলায় ইমামদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এসেছে। কোথাও কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য না দেওয়ায় ইমামকে অপসারণ,কোথাও আবার মসজিদের আয় নিয়ে প্রশ্ন করায় শারীরিক হেনস্তা ।এমনকি নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ না নেওয়ার কারণে হুমকির মুখেও পড়েছেন কেউ কেউ
এই বাস্তবতায় অনেক ইমাম তাদের পেশাগত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। একজন ইমাম সমাজে প্রতিদিন পাঁচবার মুসল্লিদের সামনে দাঁড়ান, বিয়ে পড়ান, জানাজা পরিচালনা করেন, মানুষকে দ্বীনের শিক্ষা দেন। কিন্তু তার নিজের জীবনের প্রতি যখন সমাজের দায়বদ্ধতা থাকে না, তখন সে সমাজে ধর্মের মর্যাদা রক্ষাও দুর্বল হয়ে পড়ে।
ধর্মভিত্তিক সংগঠন ও সচেতন মুসল্লিরা এখন ইমামদের জন্য নিচের দাবিগুলো জোরালোভাবে উত্থাপন করছেন—
১. ন্যূনতম ১৫,০০০ টাকা বেতন রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্ধারণ
২. ইমামদের অবমাননা ও নির্যাতন রোধে আইনগত ব্যবস্থা
৩. ওয়াকফ প্রশাসন ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত
৪. ইমাম কল্যাণ ট্রাস্টকে সক্রিয় ও স্বচ্ছ রূপে পরিচালনা
৫. ইমামদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা ও আবাসন সুবিধা
২০২০ সালে ‘ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট’ গঠনের ঘোষণা এলেও এর কার্যকারিতা এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, প্রক্রিয়াধীন বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে, তবে বাস্তবে তার সুফল পাচ্ছেন না অধিকাংশ ইমাম।”
ইমামদের বেতন বাড়ানো ও নির্যাতন বন্ধ এখন শুধু ধর্মীয় দাবি নয়, এটি নৈতিক দায়িত্ব ও মানবিক কর্তব্য। সমাজের নৈতিক ভিত্তি যদি টিকিয়ে রাখতে চাই, তবে যারা সে ভিত্তিকে পরিচালনা করেন—তাদের জীবনও মর্যাদার হতে হবে।