দেশের চিত্র ডেস্ক
ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠে বছরের শুরুতেই। একই ধরনের অভিযোগ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পিও তুহিন ফারাবী এবং ডা. মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধেও ওঠে। একাধিক অভিযোগ জমা পড়ার পর গত ৪ মে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধান শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
তবে ছয় মাস অতিবাহিত হলেও তদন্ত এখনো চূড়ান্ত প্রতিবেদনের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তদন্তের ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করছে বিভিন্ন মহল।
দুদক সূত্র জানায়, তদন্ত কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত নথি সংগ্রহে বিলম্ব, অনুসন্ধানের অগ্রগতি নিয়মিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো না, অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে অসঙ্গত ও দ্বিমুখী তথ্য প্রদান—এসব কারণে তদন্তে অগ্রগতি থমকে আছে। এর সঙ্গে রয়েছে অদৃশ্য রাজনৈতিক চাপ, যা তদন্ত কর্মকর্তাদের কাজকে আরও জটিল করে তুলেছে। ফলে ইতোমধ্যে তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়েছে।
দুদকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, প্রয়োজনে আবারও তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের চিন্তা করা হচ্ছে। তাতেও কাজ না হলে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে অনুসন্ধান শেষ করা হবে।
সূত্র আরও জানায়, দুই উপদেষ্টার তিন ব্যক্তিগত সহকারীর বিরুদ্ধে বদলি–পদোন্নতিতে প্রভাব খাটিয়ে অর্থ নেয়া, মন্ত্রণালয়ের কেনাকাটায় কমিশন গ্রহণ, পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিয়ে টাকা আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে বিএফআইইউয়ের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব সংগ্রহ করে দুদক। তদন্তে অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি।
তবে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের ব্যাখ্যায় দুদক সন্তুষ্ট হতে পারেনি।
তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, অদৃশ্য রাজনৈতিক চাপের কারণে তারা প্রায়ই নথি সংগ্রহে বাধার মুখে পড়েন। ফলে অনুসন্ধান স্বাভাবিক গতিতে এগোতে পারছে না। কর্মকর্তাদের দাবি, দুদক যদি স্পষ্ট নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করে, তবে তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব।
এদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে দুদক কার্যালয়ে এনসিপি নেতাদের আনাগোনা বেড়েছে বলে জানা গেছে। কয়েকদিন আগে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন দুদকে যান। এ বিষয়ে জানতে তাকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেন, “অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা তাদের কাজ শেষ করলেই প্রতিবেদন জমা দেবেন।” তবে কবে তা জমা পড়বে—নির্দিষ্ট সময় জানাতে পারেননি।
দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে এলে তীব্র সমালোচনা দেখা দেয়। যুব অধিকার পরিষদ দুদক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও ‘মার্চ টু দুদক’ আয়োজন করে, যেখানে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়। হাইকোর্টের দুই আইনজীবী—অ্যাডভোকেট নাদিম মাহমুদ এবং শফিকুল ইসলাম—এ সম্পর্কেও দুদকে অভিযোগ দেন।
দুর্নীতি অভিযোগের পর গত ২২ এপ্রিল ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর আগে অবৈধ সম্পদের অভিযোগে দায়িত্ব হারান স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পিও তুহিন ফারাবীও।
গণঅভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে দুদক নতুন উদ্যমে কাজ করে ৪৪৫টি মামলা করেছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার ৯২ জনকে।