আন্তর্জাতিক ডেস্ক
নিউ ইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে লড়াই শুরুর পর থেকেই জোহরান মামদানিকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাকে “১০০ শতাংশ কমিউনিস্ট পাগল” বলার পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখেন যে, মামদানি মেয়র হলে নিউ ইয়র্কের জন্য সব ফেডারেল অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হবে।
কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হয়ে নিউ ইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হওয়ার পর পাল্টে গেল পুরো চিত্র। প্রথমে ক্ষুব্ধ থাকলেও ধীরে ধীরে মন নরম হয় ট্রাম্পের। আর শুক্রবারের হোয়াইট হাউস বৈঠকে তৈরি হলো এক সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশ হাস্যরস, হালকা আলাপ আর সৌহার্দ্যে ভরা।
ওভাল অফিসে প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসে হাসিমুখে ট্রাম্প; আর তার পাশে কিছুটা আনমনা ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে মামদানি—ঠিক এমন দৃশ্য ধরা পড়ে সাংবাদিকদের সামনে। এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা ছুড়ে দেন চ্যালেঞ্জিং প্রশ্ন, “আপনি কি এখনো ট্রাম্পকে ফ্যাসিস্ট মনে করেন?”
মামদানি ব্যাখ্যা শুরু করতেই ট্রাম্প তাকে হালকা টান দিয়ে মজা করে বলেন, “হ্যাঁ, বলে দিন, এটাই সবচেয়ে সহজ।”
এই মুহূর্তটি বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দেয়।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন—এ কি একই ট্রাম্প, যিনি নির্বাচনের সময় মামদানির বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছিলেন? নাকি নির্বাচনে জয়ের পর মামদানি নিজের ব্যক্তিত্ব দিয়ে প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করেছেন?
রিপাবলিকান কংগ্রেসউইম্যান নিকোল মালিয়োটাকিস মন্তব্য করেন,
“দেখে মনে হচ্ছিল ব্রোম্যান্স। মামদানির ব্যক্তিত্বে আলাদা এক আকর্ষণ আছে—কিন্তু ট্রাম্প এত দ্রুত মুগ্ধ হবেন, ভাবিনি।”
বৈঠকের আগে নিউ ইয়র্ক প্রশাসন ধরে নিয়েছিল—ট্রাম্পের সঙ্গে সংঘাত অনিবার্য। সম্ভাব্য ফেডারেল বাহিনীর হস্তক্ষেপ থেকে শুরু করে বাজেট কাটছাঁট—সবকিছুর প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু হোয়াইট হাউসের পরিবেশ বদলে দিল সব হিসাব।
বৈঠকে ট্রাম্প নিউ ইয়র্কের বিদ্যমান পুলিশ কমিশনারকে বহাল রাখার ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে আবাসন নীতি, শহর উন্নয়ন এবং প্রশাসন পরিচালনায় মামদানির পরিকল্পনার প্রশংসাও করেন তিনি। এমনকি ইসরাইল–গাজা প্রসঙ্গেও তিনি বলেন, কিছু বিষয়ে তাদের মতপার্থক্য থাকলেও কিছু জায়গায় মিল রয়েছে।
এই পরিবর্তন অনেককে বিস্মিত করেছে।
টক-শো উপস্থাপক সিড রোজেনবার্গ, যিনি কট্টর মামদানি-বিরোধী হিসেবে পরিচিত, মন্তব্য করেন:
“আমি ট্রাম্পকে ভালোবাসি। কিন্তু এই লোকটির (মামদানি) সঙ্গে হাসিমুখে হাত মেলানো? সহ্য হচ্ছে না।”
বিশ্লেষকদের মতে, শিল্পপতি থেকে ট্যাক্সিচালক—সব শ্রেণির মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারেন মামদানি। ফলে তার সহজ-সরল ব্যক্তিত্বই ট্রাম্পকে প্রভাবিত করেছে।
ওয়ার্কিং ফ্যামিলিস পার্টির সহপরিচালক আনা মারিয়া আর্কিলা স্মরণ করিয়ে দেন:
“যাকে দেশ থেকে তাড়ানোর হুমকি দেওয়া হয়েছিল, সেই ব্যক্তির সঙ্গেই আজ প্রেসিডেন্টের হাস্যোজ্জ্বল ছবি!”
অনেকে আবার মনে করিয়ে দেন—গত জুলাইয়ে ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন যে মামদানি নাকি অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন।
ফক্স নিউজের উপস্থাপক ব্রায়ান কিলমেইড রসিকতা করে বলেন,
“আমার মনে হয় জেডি ভ্যান্স ঈর্ষা করছেন। দু’জনের দারুণ জমেছে।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনৈতিক মন্তব্যকারী রস বারকান লিখেছেন,
“এভাবে চলতে থাকলে ট্রাম্প হয়তো পরেরবার নির্বাচনে মামদানিকে সমর্থনও দেবেন।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন—এমন সৌহার্দ্য টেকসই হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।
ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শাখার সহসভাপতি গ্রেস মাউসার বলেন,
“ট্রাম্প যে কোনো সময় অবস্থান বদলে ফেলতে পারেন। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।”
সুতরাং, এখনই যে বলা যাবে ‘শেষ ভালো যার, সব ভালো তার’—তা নয়।