আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সতর্ক, কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা বদলাচ্ছে কৌশল
সম্পাদক: মুহাম্মদ জাকির হোসাইন
কার্যক্রম নিষিদ্ধ একটি দলের আজকের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে ঘিরে সারা দেশে যে নাশকতা চলছে, তা জনমনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে বাস ও ব্যক্তিগত গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণ, এমনকি ময়মনসিংহে বাসচালকের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করেছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে এবং বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তবুও এই ধারাবাহিক নাশকতা প্রমাণ করছে—নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোথাও না কোথাও দুর্বলতা রয়ে গেছে অথবা দুষ্কৃতকারীরা নতুন কৌশলে মাঠে নেমেছে।
ডিএমপি কমিশনারের তথ্য অনুযায়ী, মাত্র ১১ দিনে ১৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ও দুই দিনে ৯টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ হয়েছে। আরও ভয়াবহ হলো, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে—অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরদের টাকার বিনিময়ে এসব নাশকতায় ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি শুধু আইন-শৃঙ্খলার সংকট নয়; এটি সামাজিক অবক্ষয়েরও দৃষ্টান্ত।
এ পরিস্থিতিতে কেবল পুলিশি অভিযানই যথেষ্ট নয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যে নিরাপত্তা জোরদার, প্যাট্রল বৃদ্ধি ও রাস্তার পাশে খোলা তেল বিক্রি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, তা অবশ্যই প্রয়োজনীয়। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তা ও আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে আরও দৃশ্যমান, দ্রুত ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ‘ব্রাশফায়ার’ নির্দেশ আগ্নেয়াস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় হতে পারে, কিন্তু এমন কঠোর নির্দেশ সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন উদ্বেগও সৃষ্টি করতে পারে। কঠোরতা দরকার, তবে সেই সঙ্গে জনগণের আস্থা বজায় রাখাও জরুরি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—এই সংকটের সমাধান কেবল দমননীতিতে নয়, বরং রাজনৈতিক সংলাপ ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। দেশের স্থিতিশীলতা ও নাগরিক নিরাপত্তা এখন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
এই প্রয়াসে সরকার, প্রশাসন ও সব রাজনৈতিক পক্ষকে দায়িত্বশীল ও সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন কেবল সরকারের নয়—পুরো জাতির দায়িত্ব।