1. desherchitrabd@gmail.com : Desher DesherChitra : Desher Chitra
রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা: চিকিৎসক বাংলাদেশ পুলিশের দুর্নীতি: নতুন সরকারের দায়িত্ব ও জনমতের চাপ মৌলভীবাজারে লাইফলাইন হাসপাতালে অনিয়ম ও অবহেলার অভিযোগ ছাত্রদলের কমিটি গঠনে ২০ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগ দক্ষিণ সুরমায় সাংবাদিকের বাসায় হামলা: ভাঙচুর, মারধর ও লুটপাট লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাচ্ছেন ডা. জুবাইদা খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন কি না—চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চিকিৎসকদের: মির্জা ফখরুল বাংলাদেশে কারও নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই,তারেক রহমানের ফেরাকে ঘিরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আশ্বাস জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপিতে যোগদানের ঢল: মির্জা ফখরুল ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে কেন্দ্র করে যুবদল নেতাকে মারধরের অভিযোগ, কাঠগড়ায় সিআইডি কর্মকর্তা

নিরাপদ খাদ্য চাই

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৫

মুহাম্মদ মইনুল ইসলাম

খাদ্য আমাদের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য অপরিহার্য। অথচ আজকের সময়ে আমরা খাদ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। অজানা রাসায়নিক, কীটনাশক, সংরক্ষণ উপাদান এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের লোভী কার্যকলাপের কারণে খাদ্যের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। “নিরাপদ খাদ্য চাই”—এই দাবি শুধুই একটি সচেতন নাগরিকের দাবি নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধিকার।

প্রথমেই বুঝতে হবে, নিরাপদ খাদ্য মানে কী? নিরাপদ খাদ্য হলো এমন খাদ্য যা স্বাস্থ্যহানিকর কোনো উপাদান বা রাসায়নিক, ব্যাকটেরিয়া বা দূষণমুক্ত থাকে। এটি পুষ্টিকর, পরিচ্ছন্ন এবং মানুষ খেলে কোনো ধরনের অসুস্থতা সৃষ্টিকারী নয়। নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং মানসিক উন্নয়নে সহায়ক হয়। বিপরীতভাবে, দূষিত খাদ্য শরীরকে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। খাদ্যজনিত রোগ যেমন ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস, প্যারাসাইটিক সংক্রমণ, ক্যান্সার এবং হজম সংক্রান্ত সমস্যা প্রায়ই দূষিত খাদ্যের কারণে হয়।

বর্তমানে আমাদের দেশে খাদ্য নিরাপত্তার অবস্থা উদ্বেগজনক। বাজারে পাওয়া অধিকাংশ পণ্য বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক, রঙ, কৃত্রিম সংরক্ষণ উপাদান এবং হরমোনের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। ফল ও সবজি যেনে বা অজানায় অনেক সময় অতিরিক্ত কীটনাশক স্প্রে করা হয়। মাংস ও মাছের ক্ষেত্রে হরমোন এবং সংরক্ষণ উপাদান ব্যবহার করে এগুলোর আকার ও স্থায়িত্ব বাড়ানো হয়। আর বেকারি পণ্য, ফাস্টফুড, প্যাকেজড খাবারে থাকে ক্ষতিকর এডিটিভ। এই সব উপাদান দীর্ঘমেয়াদে মানবদেহে ক্যান্সার, হরমোন সমস্যা, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য জটিল রোগের সৃষ্টি করে।

খাদ্য নিরাপত্তা কেবল স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় নয়, এটি অর্থনীতি এবং সমাজের ওপরও প্রভাব ফেলে। অসুস্থ মানুষ কাজ করতে পারে না, উৎপাদন কমে যায় এবং পরিবার ও দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। শিশু ও বয়স্কদের ওপর দূষিত খাদ্যের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, যা ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।

নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য কি কি করা যেতে পারে?
১. চলতি বাজারে সচেতনতা বৃদ্ধি: নাগরিকদের খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন করা প্রয়োজন। পণ্য কেনার আগে লেবেল পড়া, প্রযোজ্য উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ যাচাই করা জরুরি।
২. কৃষক ও উৎপাদকদের শিক্ষা: কৃষক ও খাদ্য উৎপাদকদের নিরাপদ চাষাবাদ ও প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি শেখানো। কীটনাশক ও রাসায়নিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা। জৈব চাষাবাদ ও প্রাকৃতিক পদ্ধতির প্রচলন বাড়ানো।
৩. সরকারি নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করা: খাদ্য নিরাপত্তা আইন কার্যকর করা, নিয়মিত বাজার পরিদর্শন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। সরকারি কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হলো মানুষের খাদ্যকে নিরাপদ করা।
৪. পরিবারের সচেতনতা: পরিবারে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা। প্রক্রিয়াজাত খাবারের পরিবর্তে তাজা ও পুষ্টিকর খাবার বেছে নেওয়া। ফল ও সবজি ভালোভাবে ধুয়ে ব্যবহার করা।

নিরাপদ খাদ্য চাওয়া মানে কেবল ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য নয়, এটি সমাজের বৃহত্তর স্বার্থ। যখন আমরা নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করি, তখন আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্বাস্থ্যবান, শক্তিশালী ও সৃজনশীল ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করি। এছাড়া, এটি সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয়ও বহন করে।

বর্তমানে অনেক সামাজিক আন্দোলন, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কাজ করছে। তারা মানুষকে সচেতন করছে, বাজারে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করছে এবং সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করছে। এই ধরনের উদ্যোগ আরও সম্প্রসারণ করলে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।


নিরাপদ খাদ্য চাই—এই দাবি আমাদের সকলের। এটি কেবল স্বাস্থ্য সম্পর্কিত দাবি নয়, এটি আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ, এবং আমাদের দেশের উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। আমাদের সচেতনতা, দায়িত্বশীলতা এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতা এবং পদক্ষেপই দেশের স্বাস্থ্যকর সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই আসুন, আমরা সবাই একসাথে সচেতন হই, নিরাপদ খাদ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করি এবং এই দায়িত্বকে প্রতিদিনের জীবনে বাস্তবায়িত করি।

নিরাপদ খাদ্য চাওয়া শুধু একটি বাক্য নয়, এটি একটি সচেতন, স্বাস্থ্যবান এবং শক্তিশালী জাতি গঠনের প্রতিশ্রুতি।

Share this Post in Your Social Media

Comments are closed.

এই ধরনের আরও খবর
Copyright © 2025, সাপ্তাহিক দেশের চিত্র. All rights reserved.
Weekly Desher Chitra developed by LogoMyface