আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গন আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)–কে ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে দলটিকে নিষিদ্ধের দাবিতে একটি প্রস্তাব মঙ্গলবার পাঞ্জাব প্রাদেশিক পরিষদে পাস হয়েছে। পিএমএল-এন নেতৃত্বাধীন সরকারের এই পদক্ষেপে দেশজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
ঘটনার পর থেকে আদালত ও রাজনৈতিক মহল ছাড়াও সেনাবাহিনী–বিরোধী দলগুলোর সম্পর্ক আরও টানাপোড়েনে পড়েছে। অন্যদিকে আদিয়ালা জেলের সামনে ইমরান খানের বোনদের নেতৃত্বে চলছে ধর্মঘট—যেহেতু তাদের ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি।
পিএমএল-এন–এর এমপিএ তাহির পারভেজ পাঞ্জাব সংসদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। পিটিআই সদস্যরা অধিবেশন বর্জন করলেও শাসক দল প্রস্তাবটি পাস করে। প্রস্তাবে পিটিআইকে ‘শত্রু রাষ্ট্রের হাতিয়ার’ হিসেবে বর্ণনা করে বলা হয়, দলটি দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আইএসপিআর–এর মহাপরিচালক ইমরান খানকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি’ আখ্যা দেওয়ায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নিয়েছে। যদিও প্রস্তাবে সরাসরি ইমরান খানের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে ইঙ্গিত স্পষ্ট।
পাঞ্জাবের তথ্যমন্ত্রী আজমা বোখারি বলেন, “আমি রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে না হলেও পিটিআই-এর কর্মকাণ্ড পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যদি তারা পথ পরিবর্তন না করে, তবে দল নিষিদ্ধ বা গভর্নরের শাসন—দুই বিকল্পই বিবেচনায় আসতে পারে।” তিনি আরও দাবি করেন, ভারতে উত্তেজনার সময় ইমরান খানের নীরবতা ‘রাষ্ট্রবিরোধী আচরণ’-এর শামিল।
এদিকে আদিয়ালা জেলের বাইরে ইমরানের বোন আলিমা খানের নেতৃত্বে অবস্থান ধর্মঘট চলছে। তিনি অভিযোগ করেন, বারবার আবেদন করার পরও ইমরানের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। “রাষ্ট্র আইন লঙ্ঘন করছে। ইমরানকে ১৪ মাস ধরে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি,” বলেন আলিমা।
পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গওহার আলী খান বলেন, “পরিবার ও আইনজীবীদের দেখা করার অধিকার অস্বীকার করা অমানবিক। দেখা করতে দেওয়া হলে উত্তেজনা অনেকটাই কমে যাবে।” পিটিআই নেতারা দাবি করেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই সরকার এই সিদ্ধান্তগুলো নিচ্ছে।
খাইবার পাখতুনখোয়ার এমপিএ শফিউল্লাহ জানান, আইএসপিআর-এর সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনের পর সাধারণ কর্মীদের ক্ষোভ বেড়েছে। তিনি বলেন, “বোনদের দেখা করার সুযোগ না দিলে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হবে।”
পাকিস্তানের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, সেনাবাহিনী ও পিটিআই–এর মধ্যে অবিশ্বাস নতুন মাত্রা পেয়েছে। রাজনৈতিক সংলাপ না হলে দেশ আরও অস্থিতিশীলতার দিকে ঝুঁকবে এবং মৌলিক ক্ষতি হবে সাধারণ মানুষেরই।