নিজস্ব প্রতিবেদক
পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ও বর্তমানে ওএসডি মোহা. আব্দুল আলীম মাহমুদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি এবং আয়বহির্ভূত বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তাঁর নামে এবং স্ত্রী–সন্তানসহ পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে দেশে–বিদেশে বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমি ও নগদ সম্পদসহ শত শত কোটি টাকার স্থাবর–অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। এসবের নথিও প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।
সূত্র বলছে, রাজধানীর শান্তিনগর, বনশ্রী, পূর্বাচল, খিলক্ষেত, ধামরাইসহ বিভিন্ন এলাকায় তাঁর নামে বহু ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে। সাতক্ষীরার তালা উপজেলা এবং রংপুরেও স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়দের নামে বিপুল জমি কেনার প্রমাণ মিলেছে। রংপুরের দুলাল সরণি, পুলিশ সোসাইটি এলাকা, জেলা পরিষদ শপিংমল—সব জায়গাতেই তাঁদের নামে সম্পত্তির তথ্য পাওয়া গেছে। সাতক্ষীরায় হাইওয়ের পাশে নাহার ফিলিং স্টেশন ও বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল এফডিআরের কথাও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, আবদুল আলীম মাহমুদ ১৯৯৫ সালে ১৫ তম বিসিএসের মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার পদে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন। ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। ফজলুল হক হলের নির্বাচিত বার্ষিকী সম্পাদকও ছিলেন তিনি ।
আলীম মাহমুদ নড়াইল, নোয়াখালী, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতিতে জড়ান বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি—প্রতিটি দায়িত্বকালেই ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগের পরও তিনি পদোন্নতি পান।
রংপুর, সাতক্ষীরা ও ঢাকা—তিন জায়গাতেই তাঁর বিরুদ্ধে জমি দখল, ভুয়া দলিল তৈরি, এবং স্থানীয় সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রংপুরের বাসিন্দা মশিউর রহমান অভিযোগ করেন, আলীম মাহমুদের ভাগনে জামাই তৌহিদুলের নেতৃত্বে তাঁর বসতবাড়ি ও দোকানপাট দখল করা হয়। আদালত ভুয়া দলিল বাতিল করলেও পরবর্তীতে আবার হামলা ও দখলের চেষ্টা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তালা উপজেলায় চাঁদা তোলা, এতিমখানার নামে অনুদান বাণিজ্য, গ্রেপ্তার বাণিজ্য, তদবির বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে। কয়েকজন প্রবাসী ও স্থানীয়ও অভিযোগ করেছেন যে, আলীম মাহমুদের শ্যালক টুলু তার নাম ভাঙিয়ে প্রতারণা করেছে এবং অভিযোগ করলে উল্টো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে অতিরিক্ত আইজিপি মোহা. আবদুল আলীম মাহমুদ প্রতিবেদককে বলেন,
“এসব অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।”
ভুক্তভোগী, স্থানীয়রা ও সুশীল সমাজ মনে করেন, একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এত গুরুতর অভিযোগ উঠলে তা যাচাইয়ে দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্ত করা জরুরি। দুর্নীতিবাজ ও অসৎ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাঁদের।