লাইফস্টাইল ডেস্ক
বর্তমান যুগে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সাথে সাথে ফ্যাটি লিভার একটি অত্যন্ত সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যায় পরিণত হয়েছে। লিভারের ভেতরে স্বাভাবিকভাবে কিছু পরিমাণ চর্বি থাকে, কিন্তু যখন সেই চর্বির পরিমাণ লিভারের মোট ওজনের ৫–১০ শতাংশের বেশি হয়ে যায়, তখন তাকে ফ্যাটি লিভার বা হেপাটিক স্টিয়াটোসিস বলা হয়। অনেক সময় শুরুতে এই রোগ কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ করে না, ফলে রোগীরা বুঝতেই পারেন না যে তাদের লিভারের ভেতরে ধীরে ধীরে ক্ষতি হচ্ছে। তাই ফ্যাটি লিভার সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং এর প্রতিকার জানা অত্যন্ত জরুরি।
ফ্যাটি লিভারের সাধারণ লক্ষণ
প্রাথমিক অবস্থায় ফ্যাটি লিভারের কোনো দৃশ্যমান উপসর্গ থাকে না। তবে রোগটি যখন অগ্রসর হতে থাকে, তখন কিছু লক্ষণ ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় ।
১. ক্লান্তি ও অবসাদ
রোগীরা সাধারণত স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ক্লান্তি অনুভব করেন। শরীর শক্তি উৎপাদনে লিভারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, তাই লিভার দুর্বল হলে সার্বিক শক্তিক্ষয় ঘটে।
২. পেটের ডান দিকে ব্যথা বা চাপ অনুভূতি
লিভার শরীরের ডান দিকে থাকে, তাই ফ্যাটি লিভার হলে সেই অংশে অসুবিধা, ব্যথা বা ভারী লাগার অনুভূতি হতে পারে।
৩. ক্ষুধামান্দ্য
লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমে গেলে হজমপ্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়, ফলে ক্ষুধা কমে যেতে পারে।
৪. বমিভাব
অনেক রোগী বমিভাব বা বদহজমের সমস্যায় ভোগেন। এটি লিভারের চর্বি জমে যাওয়া ও হজমে সমস্যা হওয়ার একটি পরিণতি।
৫. ওজন বৃদ্ধি বা হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
ফ্যাটি লিভারের সাথে মেটাবলিজমের পরিবর্তন যুক্ত থাকে। তাই কারও ক্ষেত্রে দ্রুত ওজন বাড়ে, আবার কারও ক্ষেত্রে ক্ষুধা কমে ওজন কমে যায়।
৬. জণ্ডিস (দুর্লভ ক্ষেত্রে)
রোগ অনেক বেশি অগ্রসর হলে ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যেতে পারে। এটি লিভারের গুরুতর ক্ষতির ইঙ্গিত।
ফ্যাটি লিভারের কারণ
ফ্যাটি লিভার মূলত দুই ধরনের—
১) অ্যালকোহলজনিত ফ্যাটি লিভার
২) নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার (NAFLD)
নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার এর প্রধান কারণসমূহ—
ফ্যাটি লিভারের করণীয়
ফ্যাটি লিভার প্রাথমিক পর্যায়ে সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ করণীয় তুলে ধরা হলো—
১. ওজন নিয়ন্ত্রণ
ওজন কমানো ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে কার্যকর উপায়। ধীরে ধীরে—মাসে ২–৪ কেজি ওজন কমালে লিভারের চর্বি দ্রুত কমে যায়।
2. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
৩. নিয়মিত ব্যায়াম
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম লিভারের চর্বি কমায়। সপ্তাহে ৪–৫ দিন ব্যায়াম করলে ফল দ্রুত দেখা যায়।
৪. ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
যাদের ডায়াবেটিস বা কোলেস্টেরল বেশি, তাদের অবশ্যই ডাক্তারি পরামর্শ নিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে; এতে ফ্যাটি লিভারের অবস্থা দ্রুত উন্নত হয়।
৫. অ্যালকোহল সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলা
অ্যালকোহল লিভার ক্ষতির প্রধান কারণ। ফ্যাটি লিভার থাকলে অ্যালকোহল সম্পূর্ণ বন্ধ করা জরুরি।
৬. পর্যাপ্ত পানি পান
শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হতে পানি গুরুত্বপূর্ণ। দিনে ৭–৮ গ্লাস পানি পান লিভারের জন্য উপকারী।
৭. নিয়মিত পরীক্ষা
লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT), আল্ট্রাসাউন্ড বা প্রয়োজনে ফাইব্রোস্ক্যান করে লিভারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
ফ্যাটি লিভার আমাদের জীবনে নীরব এক শত্রুর মতো কাজ করে। শুরুতে কোনো লক্ষণ না থাকায় এটি সহজেই অগ্রসর হয়ে সিরিয়াস অবস্থায় পৌঁছে যায়। তাই প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় সচেতন পরিবর্তন, সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধের মূল চাবিকাঠি। নিয়ম মানলে এই রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও সুস্থ জীবন লাভ করা সম্ভব।