সম্পাদক : মুহাম্মদ জাকির হোসাইন
ভারতের ইতিহাসে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক এক বর্ণাঢ্য সহাবস্থানের পরিচয় বহন করে। যুগের পর যুগ ধরে এই দুই সম্প্রদায় মিলেমিশে বসবাস করেছে, ভাগ করে নিয়েছে সংস্কৃতি, উৎসব ও বন্ধুত্ব। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই সহমর্মিতার বন্ধনকে ছিন্ন করার অপচেষ্টা যেভাবে চলছে, তা কেবল উদ্বেগজনকই নয়—মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। খবরে দেখা যাচ্ছে, সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর নির্বিচার নির্যাতন, বৈষম্য এবং ভয়াবহ সহিংসতা বেড়েই চলেছে। কখনও “জয় শ্রীরাম” না বলার অজুহাতে শিশু-কিশোরদের ওপর হামলা, কখনও আবার নারীদের টার্গেট করে নির্মম আক্রমণ। এসব কর্মকাণ্ডের পিছনে যে উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী সক্রিয়, তাদের কার্যক্রম ধর্মীয় আবরণে হলেও, আদতে তারা কোনও ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে না। বরং তারা সনাতন ধর্মের অন্তর্নিহিত সহিষ্ণুতা, মানবতা ও অহিংসতার শিক্ষাকেই কলঙ্কিত করছে। ভারতের অনেক হিন্দু পণ্ডিত, সমাজকর্মী ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক এই উগ্রবাদের বিরোধিতা করছেন। তারা বারবার বলছেন, এই জঙ্গিবাদী মানসিকতা ভারতের মূল চেতনার পরিপন্থী। কারণ, ভারত গড়ে উঠেছে বহু ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির সম্মিলনে—যেখানে ‘বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্য’ কেবল একটি স্লোগান নয়, বরং জাতির অস্তিত্বের মূলভিত্তি। আমরা মনে করি, এই সহিংসতা শুধু একটি সম্প্রদায়ের নয়, বরং গোটা সমাজের জন্য হুমকি। এই ধরনের উগ্রতা মানবতাবিরোধী। তা যতই ধর্মের মোড়কে ঢেকে রাখা হোক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তারা সকল ধর্ম ও মানবতার শত্রু। অতএব, সময় এসেছে সকল শুভবোধসম্পন্ন মানুষদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার। হোক না সেটা হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান বা অন্য যে কোনও ধর্মাবলম্বী—উগ্রতা আমাদের সবার শত্রু। আমরা যদি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সহিষ্ণু ও মানবিক সমাজ গড়তে চাই, তাহলে এই জঙ্গিবাদী মানসিকতার বিরুদ্ধে আজই রুখে দাঁড়াতে হবে।