1. desherchitrabd@gmail.com : Desher DesherChitra : Desher Chitra
রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা: চিকিৎসক বাংলাদেশ পুলিশের দুর্নীতি: নতুন সরকারের দায়িত্ব ও জনমতের চাপ মৌলভীবাজারে লাইফলাইন হাসপাতালে অনিয়ম ও অবহেলার অভিযোগ ছাত্রদলের কমিটি গঠনে ২০ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগ দক্ষিণ সুরমায় সাংবাদিকের বাসায় হামলা: ভাঙচুর, মারধর ও লুটপাট লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাচ্ছেন ডা. জুবাইদা খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন কি না—চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চিকিৎসকদের: মির্জা ফখরুল বাংলাদেশে কারও নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই,তারেক রহমানের ফেরাকে ঘিরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আশ্বাস জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপিতে যোগদানের ঢল: মির্জা ফখরুল ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে কেন্দ্র করে যুবদল নেতাকে মারধরের অভিযোগ, কাঠগড়ায় সিআইডি কর্মকর্তা

মৌলভীবাজারে লাইফলাইন হাসপাতালে অনিয়ম ও অবহেলার অভিযোগ

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

মৌলভীবাজার: জেলার লাইফলাইন (প্রাইভেট) হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ উঠেছে যে, এখানে চিকিৎসা সেবার নামে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি চলছে। স্থানীয়রা জানান, হাসপাতালটি শুধুমাত্র রোগীর চিকিৎসার জন্য নয়, বরং ব্যবসায়িক লাভের উদ্দেশ্যেই পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন বিভাগের সেবা, জরুরি চিকিৎসা, বিলিং প্রক্রিয়া ও রোগীর নিরাপত্তা নিয়ে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, হাসপাতালে রোগীর সেবা অত্যন্ত সীমিত এবং অনিয়মে ভরা। মৌলভীবাজার শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালকে আধুনিক ও পরিচিত ব্র্যান্ড হিসেবে ভাবলেও বাস্তব অভিজ্ঞতা ভিন্ন। এক রোগীর স্বজন জানান, “জরুরি বিভাগের রাতের সেবা প্রায় নেই। আমার গর্ভবতী স্ত্রীকে রাত তিনটায় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কেবল এক তরুণ ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ছিলেন না। রোগীকে কেবল কয়েকটি ট্যাবলেট দিয়ে কেবিনে রাখা হয়। জরুরি টেস্টও রাত ১২টা থেকে সকাল ১০টার আগে সম্ভব হয়নি।”

অভিযোগ অনুযায়ী, সিজার অপারেশনের সময় সার্জনের উপস্থিতি পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করা হয়নি। নবজাতক ও মা কেবিনে পৌঁছানো মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে, এরপর ডাক্তার এবং নার্সদের দায়িত্ব সীমিত হয়ে পড়ে। নার্সদের আচরণ ছিল যান্ত্রিক এবং ডাক্তারদের আন্তরিকতা ছিল শূন্য। এর ফলে তিন দিনের মাথায় নবজাতকের জন্ডিস ধরা পড়ে, যা আরও দীর্ঘায়িত চিকিৎসা প্রয়োজন করেছিল।

প্রতিষ্ঠানে দেখা গেছে সম্ভাব্য দুর্নীতির বিভিন্ন প্রকারভেদ। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হাসপাতাল অতিরিক্ত বিল ধার্য ও পরিবর্তন করছে রোগীর অনুমতি ছাড়া। জরুরি সেবা ও চিকিৎসার জন্য রোগীকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। ডাক্তার ও নার্সিং স্টাফের সংখ্যা অপর্যাপ্ত। রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা তদারকিতে যথাযথ মনোযোগ নেই।

ওষুধ, টেস্ট ও অন্যান্য মেডিকেল সরঞ্জাম বিক্রির মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। রোগী এবং স্বজনদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও চিকিৎসা পরামর্শ শেয়ার করা হয় না। অপারেশন এবং চিকিৎসা কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নেই। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা ও ম্যানেজারদের দায়িত্বহীনতা স্পষ্ট, এবং অভিযোগ এড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, হাসপাতালের বিলিং প্রক্রিয়াও অস্বচ্ছ। প্রাথমিকভাবে জানানো হয় ৪৬ হাজার টাকা, তবে পরবর্তীতে ৬১,৯৩৮ টাকা দাবি করা হয়। অনেক তর্ক-বিতর্ক ও হস্তক্ষেপের পর ৪৪ হাজার টাকায় হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিতে হয়। এছাড়াও, হাসপাতালের বড় বিল্ডিং, লিফট ও চকচকে করিডোর রোগীদের মনে করায় যে এটি উন্নত সেবা প্রদান করছে, কিন্তু বাস্তবে চিকিৎসা মান ও রোগী দেখাশোনার অভিজ্ঞতা অনেক পিছিয়ে।

স্থানীয়রা বলছেন, এই ধরনের বাণিজ্যিক স্বার্থপর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণহীন থাকলে রোগীদের ক্ষতি হতে পারে। মৌলভীবাজার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ অভিযোগগুলো যাচাই করছে এবং ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তারা জানান, হাসপাতালের সেবা ও ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা তাদের প্রধান দায়িত্ব।

রোগী ও স্বজনরা আশা করছেন, কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং হাসপাতালগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনবে। স্থানীয়রা বলছেন, স্বাস্থ্যসেবা শুধু ব্যবসার মাধ্যম নয়, মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। অন্যথায়, রোগী ও পরিবারগুলো প্রতিনিয়ত ঝুঁকিতে থাকবে এবং অনিয়ম, অবহেলা ও দুর্নীতি চলতেই থাকবে।

ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন, “বড় বিল্ডিং, লিফট ও চকচকে আলো দেখালেই হাসপাতাল উন্নত হয় না। রোগীর নিরাপত্তা, সেবা এবং ডাক্তার-নার্সদের আন্তরিকতা নিশ্চিত না করলে স্বাস্থ্যসেবা শুধুই ব্যবসায়িক লেনদেনের নামান্তর।”

এখনই মৌলভীবাজারের মতো জেলায় বাণিজ্যিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। স্বাস্থ্য সেবাকে মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে দেখা উচিত, শুধুমাত্র অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য নয়।

Share this Post in Your Social Media

Comments are closed.

এই ধরনের আরও খবর
Copyright © 2025, সাপ্তাহিক দেশের চিত্র. All rights reserved.
Weekly Desher Chitra developed by LogoMyface