ডেস্ক রিপোর্ট:
নাম নুরুল আলম। রামু উপজেলার পশ্চিম চাকমারকুল এলাকার নুর আহম্মদ সিকদারের ছেলে। কখনো এন আলম আবার কখনো এসএম নুরুল আলম কখনো এইচ এম নুরুল আলম আবার এন আলম হিসেবে পরিচয় বহন করেন। ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন তিনি। নামই যেনো প্রতারণার প্রধান হাতিয়ার।অনুসন্ধ্যান বলছে, পড়ালেখায় মাধ্যমিকের গন্ডি পার করতে পারেনি। কিন্তু তার আসল নাম জাতীয় পরিচয় পত্রে এইচ এম নুরুল আলম লেখা। জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার হলো ২২১৬৬১৩৬৯০৩৭৭। কিন্তু বর্তমানে সে এসএম নুরুল আলম নামে আরেকটি জাতীয় পরিচয়পত্র ঢাকা খিলগাঁও থানার বনশ্রী এলাকার ঠিকানায় ব্যবহার করছে। জাতীয় পরিচয়পত্রে স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা দেয়া হয় রামু পশ্চিম চাকমারকুল। তার গ্রামের বাড়ি রামু চাকমারকুল কলঘর হলেও কখনো পশ্চিম চাকমারকুল, কক্সবাজার পৌরসভার দিলমহল মধ্যমবাহারছড়া, কখনো ঢাকা খিলগাঁও বনশ্রী আবাসিক এলাকা, কখনো চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করেছে আসছে। কক্সবাজারের রামু উপজেলার উত্তর চাকমারকুলের এক নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও প্রতারণা বাটপারি করে আজ অন্তত দুই শত কোটি টাকার মালিক।অভিযোগ আছে, কক্সবাজার সদর ভুমি অফিসে কথিত ঝিলংজা মৌজা সৃজিত একটি ভুঁয়া খতিয়ানকে (বিএস খতিয়ান নং-১১৩৩৪) পুঁজি করে সদরের ঝিলংজা মৌজার কলাতলি বাইপাস সড়কের দক্ষিণ পাশে (চট্টগ্রাম -কক্সবাজার মহাসড়কে লাগোয়া) প্রায় ৫ কোটি টাকা মুল্যের জমি স্বাধীন ট্রাভেলসের নামে সাইন বোর্ডও লাগিয়ে দখলের চেস্টার ঘটনায় বিরাজ করছে আতংক। ভুমি অফিসে এধরনে কোন খতিয়ানের অস্থিত্ব না পেয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব বরাবর নামজারী আপিল ৪৭০/২০১৪, ১১৭৪ নং স্বারক মুলে একটি তদন্ত প্রতিবেদনও দিয়েছে সহকারী কমিশনার (ভুমি) সদর। ওই প্রতিবেদনে সহকারী কমিশনার ও নাজিরের দস্তখত নেই, মুল নামজারির নথিও পাওয়া যায়নি।শুধু জালিয়াতি এখানেই শেষ নয়,রামু কলঘর (চাকমারকুল) এলাকায় এন আলম ফিলিং স্টেশনের জমি উত্তরা ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে প্রায় ৫ কোটি টাকা সিসি লোন নেন। কিন্তু সেই জমিও বিক্রির জন্য ব্যাংকের অজান্তে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে চট্টগ্রামের মো. শাহজাহান নামের এক ব্যক্তির সাথে রেজি: বায়নাও করেছে। এন আলম ফিলিং স্টেশনের পাশ্ববর্তী স্থানীয় প্রবাসী জালাল নামের একজন ব্যক্তিকে স্বাধীন ট্রাভেলস পরিবহণের শেয়ার হোল্ডার নেয়া হয়। প্রবাসী জালাল গত দেড় মাস আগে করোনাকালিন মারা যান। তার জানাজা চাকমারকুল মাদ্রাসায় মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা দিয়ে জানাজা হয় এন আলম ফিলিং স্টেশনে। কিন্ত তিনি মারা যাওয়ায় তার কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ নিয়েও প্রবাসী পরিবার উদ্বিগ্ন।এন আলমের আরো বেশ কিছু জালিয়তি ও প্রতারণার প্রমাণ পাওয়া গেছে। কক্সবাজার পৌরসভার উত্তর রুমালিয়ারছড়ার বাসিন্দা মরহুম আমান উল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী নুর মহল বেগম চৌধুরীরানী প্রাপ্ত ঝিলংজা মৌজার বিএস ১০৫ নং খতিয়ানের অংশ অনুযায়ী প্রাপ্ত মাত্র তিন শতক জমি। একাধিক ব্যক্তিকে ভিন্ন ভিন্ন দলিলে প্রায় সাড়ে ৩৯ শতক জমি বিক্রির ঘটনা নিয়েও উঠে এসেছে ভয়াল জালিয়াতির তথ্য। কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা মৌজার ১০৫ নং খতিয়ানের ২০৩০৭ দাগের প্রাপ্ত তিন শতক জমি নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ভিন্ন রেজিঃ দলিলে প্রায় ৩৯ শতক জমি জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রি করা নিয়ে ব্যাপক জটিলতার সৃষ্টি করেছে।তথ্য বিশ্লেষনে জানা গেছে, কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা মৌজার বিএস খতিয়ান নং ১০৫ এ জমির পরিমান ৪.২১ শতক। ওই নুর মহল বেগম চৌধুরী রানী ১০৫ খতিয়ানের ২০৩০৭ দাগে প্রাপ্ত জমির পরিমাণ ৩ শতক।কিন্ত তিনি জীবদ্দশায় বিগত ১০/৫/২০০২ ইং রেজি : দলিল নং ১৪৯৯ মুলে ঝিলংজা মৌজার ১০৫ নং খতিয়ান থেকে ২০৩০৭ দাগের ৮ শতক জমি মমতাজ আহম্মদ পিতা-আলহাজ হাফেজ আহম্মদকে বিক্রি করেন। কিন্ত একই ভাবে নুর মহল চৌধুরীরানী একই তারিখে (১৪/৫/২০০২ ইং) ১৫০০ নং কবলা মুলে মোহাম্মদ হোসেন পিতা-রকিম আলী কেও ৮ শতক জমি বিক্রি করে নিঃস্বত্ববান হন। এরপরে একই ভাবে ঝিলংজা মৌজার বিএস ১০৫ খতিয়ান হতে নুর মহল বেগম চৌধুরীরানী ২০৩০৭ নং দাগের জমি হতে দলিল নং ২০৫১ তারিখ ১১/৭/২০০৪ মুলে আরো ৪ শতক জমি মোহাম্মদ মহসিন মিতা-মৃত ইলিয়াছকে বিক্রি করেন।
এদিকে, চরম জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ঝিলংজা মৌজার বিএস খতিয়ান নং-১০৫ দাগ নং ২০৩০৭ জমির পরিমাণ মতে নুরমহল চৌধুরীরানী জমি পান ৩ শতক। কিন্ত তিনি প্রাপ্ত জমির চেয়ে আরো ১৭ শতক জমি অতিরিক্ত বিক্রি করেন। এই পর্যন্ত পেছনের গল্প।
পরে নুরুল আলমসহ জাল জালিয়াতি চক্রের সদস্যরা একে অপরের সাথে যোগসাজশ করে চট্টগ্রামের বন্দর থানাধীন দক্ষিন হালিশহর উত্তর শাহপাড়ার সেলিম রেজা, মোহাম্মদ শাহজাহান ও মোহাম্মদ আকতার মিয়া (সর্বপিতা-আহম্মদ শরীফ সওদাগর) নুর মহল চৌধুরীরানী হতে দীর্ঘ ২ বছর পর গত ৩/৮/২০০৪ ইং রেজিঃ দলিল নং ২৩৭৬ মুলে ঝিলংজা মৌজার ১০৫ নং খতিয়ানের ২০৩০৭ দাগের প্রাপ্ত জমি ৩ শতকের মধ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে অতিরিক্ত ২০ শতক জমি বিক্রি করেন। সেখানে সেলিম রেজাগংকে আবারও ১৯.৬৬ শতক জমি বিক্রি করেন।
সেলিম রেজাগং পনশুন্য অবস্থায় নুরমহল চৌধুরীরানীর জমি না থাকার কারণে তারা নামজারী খতিয়ান করতে পারেনি।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, তারা ভুমি অফিসের ভুমি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বশে এনে জালিয়াতির মাধ্যমে বিগত ১০/৪/২০১৩ সালে একটি ভুয়া খতিয়ান সৃজন করেন।যার নাম্বার ঝিলংজা মৌজার সৃজিত খতিয়ান নং-১১৩৩৪। এব্যাপারে আমান উল্লাহ চৌধুরীর ছেলে দিদারুল আজম চৌধুরী গত ২০১৪ সালে মিচ পিটিশন মামলা নং- ৪৭০/২০১৪ কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ওই খতিয়ানের কার্যক্রম স্থগিত করেন এবং সহকারী কমিশনার ভুমি সদর হতে প্রতিবেদন তলব করেন। ওই জমি থেকে আমান উল্লাহ চৌধুরীর স্ত্রী নুর মহল বেগম চৌধুরী হতে জমি ক্রয় করেছে বলে নামজারী ও জমাভাগ মামলা ৯৩৮/২০১৩ মুলে বিএস ১১৩৩৪ খতিয়ান সৃজন করে বলে প্রচার করা হয়।অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে,
২০১৪ সালে সহকারী কমিশনার (ভুমি) সদর কক্সবাজার উক্ত বিএস ১১৩৩৪ খতিয়ানের বিরুদ্ধে একটি ১২১৭৪ নং স্মারক মুলে পুর্নাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, উক্ত খতিয়ানে সহকারী কমিশনার ভুমি এর দস্তখত নেই, নামজারী করার রেকর্ডও নেই। এছাড়া উক্ত খতিয়ানে নাজিরের দস্তখতও নেই।কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলাপ্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয়ের স্মারক নং-১১৭৪আরএম,তাং-২৭/৭/২০১৪.সহকারী কমিশনার ভুমি সদর এর কার্যালয়ের থেকে ২৪/১২/২০১৪ ইং দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদন এমনই তথ্য মিলেছেপ্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সহকারী কমিশনার ভুমি সদর এর কার্যালয়ের সৃজিত ১১৩৩৪ নং খতিয়ানে নাজির এবং সহকারী কমিশনার ভুমি এর দস্তখত নেই। নামজারী মামলার মুল নথিও নেই। পরবর্তীতে মিচ পিটিশন মামলা নং-৪৭০/২০১৪ মুলে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয়ে ২৭/৭/২০১৩ ইং তারিখে ১১৭৪ নং স্মারক মুলে সৃজিত ১১৩৩৪ নং খতিয়ান স্থগিত করেন।অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কার্যালয়ে স্থগিতকৃত ও ভুঁয়া খতিয়ানকে পুঁজি করে
অস্থিতববিহীন, স্থগিত করা নামজারী ১১৩৩৪ খতিয়ান দিয়ে সেলিম রেজাগং রেজি: দলিল নং -৫২২ মুলে গত ২০/২/২০২০ সালে ওই এইচএম নুরুল আলম প্রত্যাহারযোগ্য আমোক্তার নামা করেন। জমিতু নেই-ই, যেখানে খতিয়ানই স্থগিত করা হয়েছে; সেখানে কতবড় জাল জালিয়াতির মাধ্যমে একটি ভুঁয়া খতিয়ান প্রদর্শন করেন। এরপরে এন আলম প্রকাশ কেরোসিন আলম বিগত ২০/২/২০২০ ইং সেলিম রেজাগং হতে জাল জালিয়াির মাধ্যমে অপ্রত্যাহার যোগ্য আমোক্তার নামা নিজের পক্ষে গ্রহণ করে। সেই নুরুল আলম নিজের নামে ভুঁয়া খতিয়ান দিয়ে জমির আমোক্তার নামা করে বেআইনী স্বাধীন ট্রাভেসল লি: এর নাম ভাঙ্গিয়ে জমি দখলের চেস্টা চালাচ্ছে।
তবে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আইসিটি ও শিক্ষা কক্সবাজার আদালতে নামজারী আপিল মামলা নং ৫৪/২০ ( বাদী- এড. নুরুল হক) ও মামলা নং-৬৯/২০ ( বাদী-সাইফুল ইসলাম চৌধুরী) মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ভুয়া বিএস খতিয়ান নং-১১৩৩৪ এর কার্যক্রমও স্থগিত করেন। এছাড়াও কক্সবাজার কলাতলি আর্দশ গ্রাম এলাকার সিরাজ আহম্মদের ছেলে বেলায়েত হোসেন বাদী হয়ে ভুয়া খতিয়ানে আমোক্তার নামা দাতা সেলিম রেজা গং এর বিরুদ্ধে যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালত কক্সবাজার অপর ৩৮১/২০১৯ নং মামলা দায়ের করেন। মামলাটিও বিচারাধীন। ২০১৯ সালে দেওয়ানী মামলা ও ২০১৪ সালে নামজারী আপিল মামলা থাকার পরেও নুরুল আলম রেজি: আমোক্তার নামা নিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে স্বাধীন ট্রাভেলস লি: এর সাইন বোর্ড টাঙিয়ে জমি দখলে মরিয়া হয়ে উঠায় জমি মালিকরা চরম উদ্বিগ্ন। নুরুক আলম ব্যক্তি আমোক্তার নামা নিয়ে একটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানী সাইন বোর্ড তোলা নিয়েও যতেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।এই নুরুল আলমের বিরুদ্ধে ফৌজদারী অপরাধে বিভিন্ন ব্যক্তির দায়ের করা অসংখ্য জিডি, মামলা ও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে রামু থানার সাধারণ ডায়েরি নং-৩৩২/১৭,১২১৯/১৭,৮৪৫/১৮, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্র আদালত নং-৪ কক্সবাজার এ ১০ লাখ টাকা চেক প্রতারণ মামলা নং- ১০৪৮/১৬ সহ আরো অসংখ্য অভিযোগও মামলা রয়েছে।এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নুরুল আলম বলেন, বিভিন্ন নামে মানুষ ডেকেছে তাই সেই নামগুলো প্রচলিত রয়েছে। স্বাধিন ট্রাভেলসে্র চেয়ারম্যান হিসেবে ওই জমির খতিয়ান রয়েছে ও নুর মহল চৌধুরী রাণীর নামে থাকা জায়গার বাইরে এক শতক জমির বিক্রি করেননি বলে দাবী করেন তিনি।