নিজস্ব প্রতিনিধি
সিলেটের বহুল আলোচিত রায়হান হত্যা মামলার প্রধান আসামি পুলিশের এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার জামিন মঞ্জুর হওয়ায় নিহতের পরিবার ও প্রবাসী স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। লন্ডনে অবস্থানরত রায়হানের বোন সংবাদ সম্মেলনে তীব্র নিন্দা ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
লন্ডনে ক্ষোভের প্রতিবাদ
রোববার (১১ আগস্ট) স্থানীয় সময় রাতে পূর্ব লন্ডনে মানবাধিকার সংগঠন ‘নিরাপদ বাংলাদেশ চাই ইউকে ইস্ট লন্ডন শাখা’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রায়হানের বোন ও দুলাভাই অভিযোগ করে বলেন,
“আমার ভাই হত্যার পাঁচ বছর হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা আজ পর্যন্ত তার সঠিক বিচার পাইনি। প্রশাসনের লোকেরা টাকার বিনিময়ে এসআই আকবরসহ প্রধান চার আসামিকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে। আমি চাই তার জামিন বাতিল করে পুনরায় পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হোক, নয়তো সে বিদেশে পালিয়ে যাবে।”
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন—বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা ও ‘জাস্টিস ফর ভয়েস’ এর সভাপতি সাংবাদিক কে এম আবু তাহের চৌধুরী, মাওলানা নিজাম উদ্দীন, নিরাপদ বাংলাদেশ চাই ইউকে ইস্ট লন্ডন শাখার সভাপতি মো. আব্দুল হামিদ শিমুল, সেক্রেটারি রাবেল আহমদ এবং নিহত রায়হানের খালাতো ভাই ও মহানগরের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম নোবেল।
কে এম আবু তাহের চৌধুরী বলেন, “এসআই আকবরের মতো ভয়ংকর খুনিকে জামিন দেওয়া রায়হান হত্যা মামলার বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। দ্রুত তাকে ফের গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠাতে হবে, নইলে সে দেশ ছেড়ে পালাতে পারে।”
নিরাপদ বাংলাদেশ চাই ইউকে ইস্ট লন্ডন শাখার সভাপতি আব্দুল হামিদ শিমুল বলেন, “আমরা চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে প্রতিবাদ সভা করেছি রায়হান হত্যার বিচার দাবিতে। অথচ প্রায় ছয় মাস পর, ১০ আগস্ট প্রধান আসামি এসআই আকবর জামিনে মুক্তি পায়। এতো সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তার মুক্তি প্রমাণ করে, বাংলাদেশের প্রশাসনে এখনো রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দোসররা সক্রিয় রয়েছে।”
মামলার পটভূমি
২০২০ সালের ১১ অক্টোবর সিলেট নগরীর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত হন রায়হান আহমদ। পুলিশ প্রথমে দাবি করে, তিনি ছিনতাইয়ের সময় গণপিটুনিতে মারা গেছেন। কিন্তু পরিবারের অভিযোগ ও গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, তাকে ফাঁড়িতে নিয়ে মারধর করা হয় এবং চিকিৎসা বিলম্বিত করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়।
রায়হান হত্যা মামলায় এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া প্রধান আসামি হিসেবে গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয় যে, আকবর নিজে এবং ফাঁড়ির অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা নির্যাতনে সরাসরি জড়িত ছিলেন। মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে চললেও একাধিকবার সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত ও শুনানি পিছিয়ে যায়।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, মামলাটি রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক গাফিলতির কারণে ধীরগতিতে চলছে। এসআই আকবরের জামিন মঞ্জুর হওয়াকে তারা বিচার ব্যবস্থার জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন।