ডেক্স নিউজ
দেশে বসবাসরত ১১ লাখ রোহিঙ্গার দুই বছরের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটাতে বাংলাদেশ সরকারসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে ব্যয়ের জোগান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ত্রাণ বা সহায়তা বাবদ রোহিঙ্গাদের পেছনে দাতা গোষ্ঠী বা অন্য কোনও সূত্র থেকে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার বাইরেও সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে অনেক টাকাই ব্যয় হয়েছে এবং হচ্ছে।রোহিঙ্গাদের পেছনে সরকারের ব্যয় প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রতিমাসে ব্যয় করছে তিনশ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া হিসেব অনুযায়ী গত তিন বছরে (৩৬ মাসে) রোহিঙ্গাদের পেছনে সরকারের সরাসরি ব্যয়ের পরিমাণ ৯০ হাজার কোটি টাকা।জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের জন্য খাবারসহ ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশুদের জন্য স্বাস্থ্য শিক্ষা বিষয়ক সহায়তা দিচ্ছে সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ইউএনএইচসিআর, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক ও দেশীয় এনজিওর সহায়তায় রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে।বর্তমানে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির আওতায় দুই থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের জন্য প্রতি মাসে ৩০ কেজি চাল, নয় কেজি ডাল ও তিন লিটার ভোজ্য তেল দেওয়া হচ্ছে। চার থেকে সাত সদস্যের পরিবারের জন্য জন প্রতি মাসে ৬০ কেজি চাল, ১৮ কেজি ডাল ও ছয় লিটার ভোজ্য তেল এবং আট এর অধিক সদস্যের পরিবারের জন্য প্রতি মাসে ১২০ কেজি চাল, ২৭ কেজি ডাল এবং ১২ লিটার ভোজ্য তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি প্রতি মাসে দুই রাউন্ডে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে।এর বাইরেও ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য বিভিন্ন প্রকার শিশুখাদ্য সরবরাহ করা হয়। দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় ওষুধ। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এর যাবতীয় ব্যবস্থাপনা করে।অপরদিকে ২০১৮ সালের জুন মাসে জাতিসংঘের তৈরি করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এই ১০ লাখ রোহিঙ্গার পেছনে সরকারের বছরে খরচ হতে পারে অন্তত ৬০ কোটি ডলার। দুই বছরের হিসেবে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ১২০ কোটি ডলার। যেটি কিনা বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার ক্ষেত্রে বড় ধরনের একটি প্রতিবন্ধকতা।জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের পেছনে সরকারের মাসিক ব্যয় মাথাপিছু ৭০০ ডলার। অথচ এ বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গাদের জীবনযাত্রার চাহিদা মেটাতে একই পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের। কিন্তু এই ব্যয়ভার বহনের জন্য কোনও আয়ের উৎস নেই। তবুও ব্যয় থেমে নেই। আর এ কারণেই টানা দুই বছর এই বিশাল ব্যয়ভার বহন করতে হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারকেই।এর বাইরেও ২০১৮-১৯ অর্থবছর সরকারের বাজেটে আলাদা করে রোহিঙ্গাদের জন্য ৪শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ বছরেও রোহিঙ্গাদের পেছনে সরকারের দেওয়া বরাদ্দের পরিমাণ ৪ শ কোটি টাকার কমবেশি। তবে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের বাজেটে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন খাতে সরকার ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল।এদিকে জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৭ লাখ ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা। একই কারণে ১৯৭৮-৭৯, ১৯৯১-৯২ ও ১৯৯৬ সালেও বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গারা। আশ্রয়ের পর তাদের জন্য তৈরি করা আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে নতুন করে জন্ম নিয়েছে আরও প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু। জাতিসংঘের এ হিসেব অনুযায়ী আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার পরিমাণ এখন ১১ লাখের বেশি।বিভিন্ন সরকারি দফতর, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও জাতিসংঘের বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ফলে এসকল হিসেব বিবেচনায় নিলে বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১১ লাখ ১৮ হাজারেরও বেশি।একবার চিন্তা করুন এর অর্ধেক পরিমাণ টাকা যদি শুধু সামরিক খাতে ব্যয় হতো তাহলে কি ধরনের সামরিক সরঞ্জাম কেনা সম্ভব ছিল?ভাবতে পারেন এই করোনায় আমরা কতজন বাংলাদেশীকে সে টাকায় অনুদান দিতে পারতাম?!কত কিমি পাকা সড়ক করতে পারতাম?কয়টি ব্রিজ কিংবা বন্দর করতে পারতাম রোহিঙ্গা রক্ষার দায় শুধুমাত্র বাংলাদেশের না।মিয়ানমারে উদ্ভুত এক পরিস্থিতির খেসারত দিচ্ছে বাংলাদেশ।যারা বলবেন,তাদের রোহিঙ্গাদের কেন নোবেল প্রাইজের আশায় এ দেশে থাকতে দিয়েছে?তাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন্য,বুকে হাত দিয়ে বলুন,,আপনারা কি নিজে এদের আশ্রয়দানের পক্ষে ছিলেন না?বাংলাদেশ না চাইতেও এক প্রক্সি ওয়ারের মাঝে আটকে গেছে।যার খরচ,একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী বিনির্মাণের চাইতেও বেশী।আর এ যুদ্ধ থেকে সহসা বের হবার কোন পথ সামনে নেই বাংলাদেশের।