নিজস্ব প্রতিবেদক
গত বছরের জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠিত গণ–অভ্যুত্থনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। রবিবার (৩ আগস্ট) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ মামলার সূচনা বক্তব্য ও প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচারকাজের আনুষ্ঠানিক যাত্রা হয়।
এই মামলায় প্রধান আসামি শেখ হাসিনা ছাড়াও রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং তৎকালীন পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক এবং রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তাঁদের পক্ষে দায়িত্ব পালন করছেন। একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ ইতিমধ্যে অপরাধ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন।
মামলার সূচনায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, “জুলাই বিপ্লবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর গুলিতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পঙ্গু ও দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। এসবের পেছনে মূল দায়ী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর অধীন নেতৃত্ব।”
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, “আসামি শেখ হাসিনা ছিলেন সরকারের একক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী। আন্দোলন দমনে যৌথ অপরাধমূলক পরিকল্পনার আওতায় প্রশাসন ও দলীয় ক্যাডাররা প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে।”
প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণ, যিনি গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি বলেন, “সাইনবোর্ড থেকে ঢাকার পথে আসার সময় পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ফ্লাইওভারের নিচে পিলারের আড়ালে লুকালেও গুলি থামেনি। আমার হাত-পা ও মুখে গুলি লাগে। মুখ বিকৃত হয়ে গেছে।”
তিনি আরও জানান, চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়, যেখানে তাঁর মুখ থেকে গুলি অপসারণ করা হয়।
আদালতে মুখে গুলির ক্ষত প্রকাশ করে খোকন বলেন, “শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ওবায়দুল কাদের ও শামীম ওসমান—এই পাঁচজন আমার ক্ষতির জন্য দায়ী।”
পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন জেরা করে জানতে চান, “আপনি শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছেন, তার প্রমাণ কী?” খোকনের জবাব ছিল, “না, লিখিত দলিল নেই, তবে আমি নিজ চোখে যা দেখেছি, তার ভিত্তিতেই বলছি।”
আইনজীবীর দাবি ছিল, আন্দোলনকারীরাই পুলিশের ওপর অস্ত্র নিয়ে হামলা করেছিল। খোকন তা অস্বীকার করেন।
এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও তিনটি মামলা চলমান। এর মধ্যে একটি মামলায় তাঁকে আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি দুটি মামলায় যথাক্রমে ১২ আগস্ট ও ২৪ আগস্ট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ নির্ধারিত রয়েছে।
https://shorturl.fm/ra7iH