নিজস্ব প্রতিবেদক
গত ১৪ মাসে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে সাবেক ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত অভিযোগে মোট ৫৬,১৮৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে গ্রেফতার হওয়া এসব ব্যক্তির মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, যা আইনপ্রয়োগ ও বিচারপ্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, প্রশাসনের সাবেক সুবিধাভোগী, দলীয় ক্যাডার এবং বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাও রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বড় একটি অংশে অভিযোগ ছিল ক্ষমতার অপব্যবহার, বিরোধী মত দমন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করার।
তবে বাস্তব চিত্র হলো—গ্রেফতারের পর তদন্ত ও অভিযোগপত্র দাখিলে দীর্ঘসূত্রতা, দুর্বল মামলা প্রস্তুত এবং সাক্ষ্যপ্রমাণের ঘাটতির কারণে অধিকাংশ অভিযুক্তই জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দায়ের করা অনেক মামলাই পর্যাপ্ত আইনি ভিত্তি ছাড়া হওয়ায় আদালতে টিকছে না।
মানবাধিকারকর্মীদের মতে, একদিকে ফ্যাসিবাদী দোসরদের জবাবদিহির আওতায় আনার কথা বলা হলেও অন্যদিকে দ্রুত জামিনে মুক্তি পাওয়ার ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরি করছে। এতে ন্যায়বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এবং দায়মুক্তির সংস্কৃতি আরও শক্তিশালী হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে সরকারপক্ষের বক্তব্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে কাউকে রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে আটক রাখা সম্ভব নয়। যথাযথ প্রমাণ না থাকলে আদালত জামিন দেবেন—এটাই স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়া। সরকার বলছে, তদন্ত জোরদার করা হচ্ছে এবং গুরুতর অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে শক্ত মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধুমাত্র গ্রেফতারের সংখ্যা দিয়ে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান বা বিচার নিশ্চিত হয় না। প্রয়োজন স্বচ্ছ তদন্ত, শক্তিশালী প্রসিকিউশন এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বিচারব্যবস্থা। তা না হলে ব্যাপক গ্রেফতার শেষে গণহারে জামিনের এই চিত্র ভবিষ্যতে আরও গভীর আস্থাহীনতা তৈরি করবে।