ডেস্ক রিপোর্ট::
প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন নিয়ে সরকারের গৃহিত আংশিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে দ্বীপবাসী। প্রতিবাদে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।তারা বলছে, দ্বীপে পর্যটক যাওয়া বন্ধ হলে স্থানীয় বাসিন্দা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীসহ প্রায় ৩ লক্ষ মানুষ জীবিকা হারাবে। হুমকির সম্মুখীন হবে পর্যটনখাতে বিনিয়োগকারীদের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। তাই সেন্টমার্টিন দ্বীপ নিয়ে সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তের আংশিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপের সর্বস্তরের মানুষ।প্রতিবাদ সভায় বক্তারা জানান- সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকদের ভ্রমন সীমিতকরণ বা রাত্রিযাপনে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলে পর্যটন শিল্পে নিয়োজিত ৭-৮টি জাহাজ, ২০০-৩০০ বাস-মিনিবাস, ১০০ মাইক্রোবাস, ২০০ ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান, ৪০০ টুরিস্ট গাইড এবং দ্বীপের ১২০ টি হোটেল-কটেজ ও ৭০টি রেস্তোরাঁয় কর্মরতদের জীবন জীবিকা বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা।১৭ই আগস্ট বিকেল ৩ টায় সেন্টমার্টিন দ্বীপবাসী প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়।সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুরুল আমিন এর সভাপতিত্বে ও বিশিষ্ট রিসোর্ট ব্যবসায়ী এম এ রহিম জিহাদির পরিচালনায় সভায় সেন্টমার্টিন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান, সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুরহমান, বিএনপি সেন্টমার্টিন দ্বীপ শাখার সভাপতি নুরুল আলম, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন সেন্টমার্টিন দ্বীপ শাখার সভাপতি কেফায়েত উল্লাহ খান বক্তব্য দেন।এছাড়া বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ীগণ, সাংবাদিকবৃন্দ, আলেম সমাজ, ছাত্র সমাজ, যুব সমাজ তথা সর্বস্তরের জনসাধারণ উক্ত প্রতিবাদ সভায় অংশ গ্রহণ করেন।উল্লেখ্য যে, গত ৬ আগস্ট জুমমিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় যে, প্রতিদিন মাত্র ১২৫০ পর্যটক সেন্টমাটিন দ্বীপ দিবাকালিন ভ্রমন করতে পারবে কিন্তু রাত্রি যাপন করতে পারবেন না। সংবাদটি সেন্টমার্টিন দ্বীপ নির্ভর পর্যটন ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় জনগোষ্টিকে উদ্বিগ্ন ও বিস্মিত করেছে। পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন ৭-৮টি জাহাজের মাধ্যমে ৪/৫ হাজার পর্যটক দ্বীপটিতে ভ্রমন করেন এবং এর মধ্য হতে ৩০% পর্যটক রাত্রীযাপন করেন।বক্তারা বলেন, সরকার ২০০৯ সালে পর্যটনকে ’শিল্প’ ঘোষনার পর থেকে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে সম্পূর্ণ বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পর্যটন শিল্প বিকশিত হয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটন বিকশিত হবার পূর্বে স্থানীয় জনগোষ্টি সমুদ্র হতে মাছ আহরনের পাশাপশি প্রবাল উত্তোলন, প্রবাল পাথরকে নির্মাণ কাজে ব্যবহারের জন্য উত্তোলন করে বিক্রি, মাছের অভয়ারণ্য ধ্বংস, শামুক-ঝিনুক সংগ্রহ করে বিক্রি, কাছিমের আবাসস্থল নষ্ট করাসহ বিভিন্ন উপায়ে জীবিকা নির্বাহ করত। সেন্টমাটিনে পর্যটন শিল্প বিকাশিত হওয়ার পর উক্ত জনগোষ্টি বিকল্প জীবিকায়ন হিসেবে পাওয়ায় তাদের জীবনধারায় আমুল পরিবর্তন আসে এবং তারাই পরিবেশ রক্ষায় সোচ্ছার ভুমিকা পালন করছে।প্রধানমন্ত্রীর স্ব-উদ্যোগে সর্বপ্রথম ২০১৬ ও ২০১৭ সালকে পর্যটনবর্ষ ঘোষনা করার ফলে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দারা উৎসাহিত হয়ে তাদের বাসা-বাড়ির এক-দুই রুম পরিবেশবান্ধব অতিথিশালা তৈরী করে পর্যটক সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। দ্বীপকে ভালবেসে বাৎসরিক মাত্র ০৫ মাসের ব্যবসা করার ঝুঁকি নিয়ে উদ্যোগক্তাগণ বিপুল বিনিয়োগ করেছেন।সেন্টমার্টিন দ্বীপকে প্রতিবেশ সংকটপন্ন এলাকা ঘোষনার পূর্বেই নির্মিত ৭/৮টি বিল্ডিং ছাড়া বাকি সব স্থাপনা সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভারসাম্য রক্ষার উপযোগী ইকো-ট্যুরিজম ব্যবস্থাপনায় নির্মিত।বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্টের পানির উচ্চতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভবিষ্যতে কি কি ক্ষতি সাধিত হতে পারে এবং উক্ত ক্ষতি মোকাবেলায় কোন পরিকল্পনা গ্রহন না করে শুধুমাত্র পরিবেশ রক্ষার অযুহাতে পর্যটক সীমিত করে দ্বীপের কোন উপকার হবে বলে আমরা মনে করিনা বরং এই সিদ্ধান্ত দেশীয় পর্যটন শিল্প বিকাশ বাধাগ্রস্থ করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছি। ইতোমধ্যে সেন্টমার্টিন দ্বীপকে মায়ানমার বার বার তাদের মানচিত্রে প্রদর্শিত করায় আমরা দুঃচিন্তায় আছি।আমরা দৃঢ়চিত্তে বলতে চাই, আমরা দ্বীপবাসি এবং দ্বীপ নির্ভর পর্যটন ব্যবসায়ী দ্বীপকে অনেক ভালবাসি এবং দ্বীপের পরিবেশ বিষয়ে অনেক সচেতন আছি। পর্যটন বাঁচিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রতিবেশ সংরক্ষণে সরকারি যে কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আমরা সার্বিক সহযোগিতায় প্রস্তুত আছি।পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলেন, এমনিতেই করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাভাবে আমরা পর্যটন ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ভাবে ক্ষতির স্বীকার হয়েছি। এখনো পর্যন্ত সরকারি বা অন্য কোন সংস্থা হতে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার সহায়তা বা প্রণোদনা পাইনি। দ্বীপকে ঘিরে পর্যটন ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ মেয়াদি বিনিয়োগ করলেও এখনো লগ্নীকৃত বিনিয়োগ উত্তোলণের সুযোগই আসেনি। তাই এই মুহুর্তে এ ধরণের সিদ্ধান্ত দেশীয় পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি পর্যটন নির্ভর দ্বীপবাসিরা জীবিকা হারালে আবারো পরিবেশ ধংসকারী কর্মকান্ডে জড়িয়ে যেতে পারে।ছবিতে থাকতে পারে: এক বা আরও বেশি ব্যক্তি এবং লোকেরা বসে আছে।