গাজায় সামরিক অভিযান ও মানবিক ত্রাণ প্রবেশে বাধা না দিলে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্স। তিন দেশের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের আশঙ্কা তৈরি করছে, যা তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারবেন না।
ব্রিটিশ সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, “বেসামরিক জনগণের জন্য জরুরি ত্রাণ সরবরাহে ইসরায়েলের ব্যর্থতা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। আমরা গাজায় চলমান মানবিক সংকটে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং পশ্চিম তীরে যেকোনো বসতি সম্প্রসারণের বিরোধিতা করছি। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আমরা সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞাসহ পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।”
এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন যুক্তরাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা কিয়ের স্টারমার, কানাডার প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মার্ক কার্নি এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ।
বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, “লন্ডন, অটোয়া ও প্যারিসের নেতারা ৭ অক্টোবরের গণহত্যার জন্য দায়ীদের পুরস্কৃত করতে চাইছেন। তারা সন্ত্রাসীদের উৎসাহ দিচ্ছেন।” তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েল আত্মরক্ষার জন্য অভিযান চালিয়ে যাবে যতক্ষণ না পুরোপুরি বিজয় অর্জিত হয়। যুদ্ধ থামাতে হলে গাজায় আটক সকল ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্ত করতে হবে এবং গাজাকে অসামরিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে।”
উল্লেখ্য, চলতি বছরের মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজায় ওষুধ, খাদ্য ও জ্বালানি প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তিতে চাপ সৃষ্টির কৌশল হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে গাজায় জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে।
তিন পশ্চিমা নেতা তাদের বিবৃতিতে আরও বলেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আমরা স্বীকার করি। কিন্তু গাজায় বর্তমান অভিযান আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এবং তা সমর্থন করা যায় না।” তারা গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকে স্বাগত জানান এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
হামাস এই বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, “এটি আন্তর্জাতিক আইন পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে গুরুত্বপূর্ণ এক অগ্রগতি।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর ২০২৩ থেকে চলমান ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। গাজার অধিকাংশ এলাকা এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে রয়েছেন।
সূত্র: রয়টার্স