দেশের চিত্র ডেস্ক
যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ঐতিহাসিক সংগঠন বাংলাদেশ সেন্টার–এর দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উত্তর লন্ডনের কেনসিংটনে সেন্টারের নিজস্ব ভবনে কাউন্সিল অব ম্যানেজমেন্টের সভা ডাকেন লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ও বাংলাদেশ সেন্টারের চেয়ারম্যান আবিদা ইসলাম। তবে সভাস্থলে পৌঁছেই তিনি তীব্র বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সেন্টারে প্রবেশের পর হাইকমিশনারের সঙ্গে তর্কে জড়ান সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলি আহমেদ, এবং বর্তমান কমিটির আরও কয়েকজন সদস্য। সভায় গণমাধ্যম প্রতিনিধির উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হট্টগোলের কারণে বক্তব্যও দিতে না পেরে সেন্টার ত্যাগ করেন হাইকমিশনার।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, হাইকমিশনারের সঙ্গে থাকা কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দেলোয়ারের অনুসারীদের কথা–কাটাকাটি হয়। অভিযোগ ওঠে, হাইকমিশনের নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা (ডেপুটি হাইকমিশনার) দেশে গেলে তাঁকে ‘দেখে নেওয়া হবে’—এমন হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
প্রায় ২০ মিনিট পর ব্রিটিশ পুলিশের উপস্থিতিতে আবিদা ইসলাম পুনরায় সেন্টারে ফিরে এসে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য শোনেন। তবে এ বিষয়ে হাইকমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। আজ মঙ্গলবার স্থানীয় সময় বিকেল চারটায় হাইকমিশনে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।
বাংলাদেশ সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে জানান, নির্বাচিত কমিটির সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই হাইকমিশনার সভা ডেকেছেন। তাঁর দাবি, “পদাধিকারবলে হাইকমিশনার চেয়ারম্যান হলেও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁর ভোটাধিকার নেই। তাই গত রাতের সভা ঠেকাতে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, আগামী ২৬ নভেম্বর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গত ৯ ফেব্রুয়ারি সাধারণ সভায় সদস্যরা কণ্ঠভোটে কমিটির মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাই এখনই নির্বাচন নয়, বরং শিগগির কাউন্সিল অব ম্যানেজমেন্টের সভা ডেকে গঠনতন্ত্র সংশোধন ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।
অন্য পক্ষের নেতা অধ্যাপক শহীদুর রহমানের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে গতকালের ঘটনার নিন্দা জানানো হয় এবং পরিস্থিতির জন্য দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর অনুসারীদের দায়ী করা হয়।
ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম বলেন, “বিব্রতকর পরিস্থিতির কারণে আমি সেন্টার ছেড়ে গেলেও দায়িত্বশীল অবস্থানে থাকার কারণে ফিরে এসেছি। বাংলাদেশ সেন্টারকে ঘিরে যে বিভেদ তৈরি হয়েছে, তা দ্রুত নিরসনে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “২৬ নভেম্বর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন জরুরি। সব পক্ষই নির্বাচনের বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করি।”