অনলাইন ডেস্ক
বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত ২০০৯ সালের হত্যাযজ্ঞের তদন্তে গঠিত জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন তাদের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে। রবিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশন প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমানসহ সদস্যরা এ প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন।
কমিশনের সদস্যরা হলেন— মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. সাইদুর রহমান বীর প্রতীক, যুগ্মসচিব (অব.) মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, ডিআইজি (অব.) ড. এম. আকবর আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মো. শরীফুল ইসলাম এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহনেওয়াজ খান চন্দন।
প্রতিবেদন গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা বলেন,“বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে জাতির বহু প্রশ্নের অবসান ঘটাবে এই প্রতিবেদন। আপনারা সত্য উদ্ঘাটনে যে ভূমিকা রেখেছেন, জাতি তা স্মরণে রাখবে।”
১৬ বছর আগের ঘটনার তদন্ত অনেক আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। কমিশন প্রধান ফজলুর রহমান জানান, ঘটনাটি দীর্ঘ সময় আগের হওয়ায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলামত ধ্বংস হয়ে গেছে এবং সংশ্লিষ্ট অনেক ব্যক্তি বিদেশে চলে যাওয়ায় তদন্ত চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে।
তিনি বলেন,
“সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহে সর্বোচ্চ পেশাদারি বজায় রাখা হয়েছে। কারও বক্তব্য ৮ ঘণ্টা পর্যন্তও শুনেছি।”
বহিঃশক্তি ও রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার দাবি কমিশনের। কমিশনের সদস্য জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার প্রতিবেদনের কিছু ফাইন্ডিংস তুলে ধরে বলেন,
এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত ছিল এবং কমিশনের দাবি অনুযায়ী এর পেছনে “বহিঃশক্তির সম্পৃক্ততা” ও “তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের প্রমাণ” পাওয়া গেছে।
তিনি আরও বলেন,
ঘটনায় “প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা” পালন করেছেন তৎকালীন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস” এমন দাবি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর “স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী পিলখানায় ঢোকা বের হওয়ার ঘটনায় ভূমিকা রেখেছে” এমন পর্যবেক্ষণও প্রতিবেদনে রয়েছে বলে তিনি জানান।
কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় তৎকালীন সরকার প্রধান, সেনাপ্রধান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার “ব্যর্থতা বা ভুল সিদ্ধান্ত” চিহ্নিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে কিছু গণমাধ্যম ও সাংবাদিকের “অপেশাদার আচরণ” নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে ভবিষ্যতে বাহিনীগুলোর ভেতরে বৈরী পরিস্থিতি প্রতিরোধ, নিরাপত্তা কাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে—জানান সদস্যরা।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন,জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ এবং স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি।