1. desherchitrabd@gmail.com : Desher DesherChitra : Desher Chitra
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৫ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
গণতন্ত্রের জন্য হুমকি: রাজনৈতিক সহিংসতা ও জঙ্গি কায়দায় হামলা আসিফ মাহমুদকে ঘিরে হুমকিমূলক মন্তব্য: নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার ফেসবুক কমেন্ট ঘিরে উদ্বেগ বিজয়নগরে গুলিবিদ্ধ ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী কোমায় পাকিস্তানে উত্তেজনা চরমে: পাঞ্জাব সংসদে পিটিআই নিষিদ্ধের প্রস্তাব পাস, ইমরানের পরিবারে বিক্ষোভ জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ বাবরি মসজিদ নির্মাণ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে উত্তেজনা, রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র বিরোধ মৌলভীবাজারে রহস্যঘেরা বাংলোবাড়ি ঘিরে উত্তেজনা, পুলিশের অভিযান ও গোয়েন্দা নজরদারি শেখ মুজিবের মুক্তিযুদ্ধের অবদানকে অস্বীকার করতে পারব না : নুর ডিসেম্বর ১৯৭১–এ মৌলভীবাজারে মুক্তিযুদ্ধের চিত্র ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানের পর অস্ত্র জঙ্গি সন্ত্রাসীদের হাতে

২০২৪ সালের আগস্টের পর বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫

দেশের চিত্র প্রতিবেদন

২০২৪ সালের আগস্ট মাসের পর বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনকভাবে গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাজনৈতিক সহিংসতা, গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ, সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা হরণ এবং নাগরিকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রশ্ন এই সময়ে বারবার প্রকাশ পেয়েছে।

বিশেষ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা সরকারি কর্তৃপক্ষের নজরদারির মুখে পড়েছে। একাধিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সমালোচনামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত মানুষদের মধ্যে বেআইনি গ্রেফতার, হুমকি এবং নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এর ফলে নাগরিক সমাজের মধ্যে উদ্বেগ ও ভয় তৈরি হয়েছে এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের পরিবেশে প্রতিকূল প্রভাব পড়েছে।
মানবাধিকার সংস্থা এবং স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা উল্লেখ করেছেন যে, সাংবাদিকরা এবং ব্লগাররা তাদের স্বাধীনতা হারাচ্ছেন। সাংবাদিকরা প্রায়ই সরকার সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে হুমকি বা মামলার মুখে পড়ছেন।

নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের বাড়ি তল্লাশি এবং গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার ফলে সাংবাদিকরা আত্মসংযমে চলে আসছেন, যা সাংবাদিকতার স্বাধীনতা এবং তথ্যপ্রাপ্তির অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এছাড়া অনলাইন কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেন্সরশিপের মাধ্যমে জনগণের তথ্যপ্রাপ্তি সীমিত হচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য মারাত্মক বিপদ তৈরি করছে।


২০২৪ সালের আগস্টের পর শ্রমিক ও শিক্ষার্থী আন্দোলনের ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা লক্ষ্য করা গেছে। সরকারি নীতি ও প্রকল্পের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে আওয়াজ তোলা আন্দোলনগুলো প্রায়শই পুলিশের আক্রমণ এবং কড়া নজরদারির মুখে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী এবং শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের সহিংসতার অভিযোগ এসেছে।

এই পরিস্থিতি নাগরিকদের মৌলিক অধিকার যেমন—শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকার—হ্রাস করছে। একই সঙ্গে স্থানীয় আদালতের কার্যক্রমে ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা অপ্রতুল হওয়ার অভিযোগও উঠেছে।
ধর্মীয় ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তাও ২০২৪ সালের আগস্টের পর যথাযথভাবে সুরক্ষিত হয়নি। কিছু অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার, হুমকি প্রদানের এবং সম্পত্তি ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে।

এই ধরনের ঘটনা শুধু ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়কে নয়, সামগ্রিকভাবে সমাজের মধ্যে ভয় এবং বিভাজন সৃষ্টি করেছে। সরকারি পদক্ষেপ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এসব লঙ্ঘনের মাত্রা বাড়িয়েছে।


নারী ও শিশুদের অধিকার ক্ষেত্রেও গুরুতর সমস্যা দেখা দিয়েছে। লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, শ্রমিক নারীদের শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘন, এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা না দেওয়ার ঘটনা নজরে এসেছে। শিশুদের নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অক্ষমতা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।


দুর্নীতি, প্রশাসনিক শৃঙ্খলার অভাব এবং ক্ষমতার অপব্যবহারও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সরকারি কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে নাগরিকদের অভিযোগের যথাযথ অনুসন্ধান হচ্ছে না, যার ফলে তারা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।


জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করতে এবং সংবিধান ও আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী আইন কার্যকর করতে। তবে পর্যবেক্ষকরা উল্লেখ করেছেন যে, সরকারের কিছু নীতি এবং আচরণ এখনও নাগরিকদের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে।

পরিশেষে বলা যায়, ২০২৪ সালের আগস্টের পর বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি দারুণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষিত না থাকায় দেশটির গণতান্ত্রিক অবকাঠামোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

তাই জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রক্ষা করা, সংখ্যালঘু ও নারী-শিশুর অধিকার সুরক্ষা করা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর ও স্বচ্ছ ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। শুধুমাত্র এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত করা সম্ভব।

Share this Post in Your Social Media

Comments are closed.

এই ধরনের আরও খবর
Copyright © 2025, সাপ্তাহিক দেশের চিত্র. All rights reserved.
Weekly Desher Chitra developed by LogoMyface