ধর্ম
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। একসাথে বাস করতে গেলে পারস্পরিক সম্পর্ক, সহনশীলতা এবং সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। মুসলিম সমাজ নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষের সঙ্গে বসবাস করে। এ অবস্থায় অনেক সময় সামনে আসে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—অন্য ধর্মের অনুষ্ঠান, উৎসব বা আচার-অনুষ্ঠানে মুসলিমদের অংশগ্রহণ করা কি ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে অনুমোদিত বা জায়েজ?
এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আমাদের দেখতে হবে কুরআন-হাদীস, ইসলামি ফিকহ, এবং সমকালীন আলেমদের মতামত। পাশাপাশি মানবিক সম্পর্ক ও সামাজিক বাস্তবতাকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
ইসলামের মূলনীতি
ইসলাম সর্বজনীন ও সার্বিক জীবনব্যবস্থা। এটি শুধু ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষের সামাজিক, পারিবারিক ও রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা দিয়েছে। ইসলামের মূলনীতি হলো—
“তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের তারা ডাকে, তাদের গালি দিও না, ফলে তারা অজ্ঞতার কারণে আল্লাহকে গালি দিবে।”
(সূরা আল-আন‘আম: ১০৮)
অর্থাৎ অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শিষ্টাচার বজায় রাখতে হবে।
“আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না তাদের সঙ্গে সদাচরণ করতে, যারা ধর্মের কারণে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়নি।”
(সূরা আল-মুমতাহিনা: ৮)
অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ধরন
অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানে মুসলিমদের যাওয়া বিভিন্ন দিক থেকে ভিন্ন হতে পারে।
১. ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে সরাসরি অংশগ্রহণ
যেমন পূজা, মূর্তির সামনে প্রণাম, হিন্দু মন্দিরে আরতি, বা খ্রিস্টানদের গির্জায় ইবাদত প্রার্থনায় অংশ নেওয়া।
২. সামাজিক বা সাংস্কৃতিক দিক থেকে উপস্থিত হওয়া
যেমন – প্রতিবেশীর বিয়েতে যাওয়া, আত্মীয়ের কোনো দাওয়াতে অংশ নেওয়া, বা সহকর্মীর অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া যেখানে কোনো ধর্মীয় আচার নেই।
৩. শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো
অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবে সরাসরি অভিনন্দন দেওয়া নিয়ে ফকীহদের মধ্যে মতভেদ আছে।
ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত
রাসূল ﷺ মক্কা ও মদীনা সমাজে ইহুদি-খ্রিস্টানদের সঙ্গে সহাবস্থান করেছেন।
আধুনিক প্রেক্ষাপট
আজকের বহুজাতিক, বহুসাংস্কৃতিক বিশ্বে মুসলিমদের অমুসলিম বন্ধু, সহকর্মী, এমনকি আত্মীয়ও থাকতে পারে। ফলে সামাজিকভাবে অনেক সময় এমন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ আসা স্বাভাবিক।
কিছু বাস্তব দিকনির্দেশনা
অন্য ধর্মের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বিষয়টি সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল। ইসলাম যেমন ভ্রান্ত বিশ্বাসকে সমর্থন করতে দেয় না, তেমনি মানবিক সম্পর্ক ও সহাবস্থানকে অস্বীকারও করে না।
তাই মূল নীতি হলো—
অতএব, মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মেনে চলা, আলেমদের পরামর্শ নেওয়া, এবং প্রতিটি পরিস্থিতি বিচক্ষণতার সঙ্গে মোকাবিলা করা।