অনলাইন ডেস্ক
শুক্রবার ভোররাতে ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় ইসরায়েলের চালানো হামলায় দেশটির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা এবং পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। হামলার বিষয়টি ইতোমধ্যে নিশ্চিত করেছে উভয় দেশ।
‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে পরিচিত এই অভিযানে ইরানের একাধিক সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। তেহরান সরকার জানায়, হামলায় অন্তত ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানী এবং বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন:
নিহত শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা:
মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ পদধারী কর্মকর্তা। তিনি দেশটির সেনাবাহিনী এবং রেভল্যুশনারি গার্ডস (আইআরজিসি)-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলাকালে আইআরজিসিতে যোগ দিয়ে গোয়েন্দা শাখার স্থাপনায় মুখ্য ভূমিকা রাখেন। শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে অবস্থান নেওয়া এই নেতা নিহত হওয়ার বিষয়টি ইরানে গভীরভাবে আলোচিত হচ্ছে।
হোসেইন সালামি
আইআরজিসির কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এই কর্মকর্তা ২০১৯ সাল থেকে বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তার কড়া অবস্থান ও বক্তব্যের জন্য পরিচিত ছিলেন। এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “ইরানে হামলা হলে নরকের দরজা খুলে যাবে।”
গোলামালি রাশিদ
আইআরজিসি ও সেনাবাহিনীর যৌথ সমন্বয় ইউনিট খাতাম আল-আম্বিয়া‘র প্রধান ছিলেন রাশিদ। ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়কার অভিজ্ঞ এই জেনারেল সেনাবাহিনীর উপপ্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
আমির আলি হাজিযাদেহ
আইআরজিসির বিমান ও মহাকাশ ইউনিটের প্রধান। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির অন্যতম স্থপতি। একটি গোপন ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনার সময় তাকে লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয় বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। ২০২০ সালে ইউক্রেনীয় একটি যাত্রীবিমান ভূপাতিত করার ঘটনায় তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচিত হন।
নিহত পরমাণু বিজ্ঞানীরা:
ফেরেইদুন আব্বাসি
ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান। বিভিন্ন সময় তিনি পরমাণু অস্ত্র তৈরির পক্ষে মত প্রকাশ করেছিলেন। সর্বশেষ মে মাসে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন।
মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি
আজাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান এবং পরমাণু গবেষণায় যুক্ত ছিলেন।
আবদুল্লাহামিদ মিনৌচেহর
শহীদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান।
আহমেদ রেজা জোলফাঘারি
শহীদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক।
আমিরহোসেইন ফেকহি
একই বিভাগের আরেকজন অধ্যাপক, যিনি পরমাণু গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিলেন।
এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান রাতেই ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত এবং অন্তত ৬৩ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সূত্র: রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম