1. desherchitrabd@gmail.com : Desher DesherChitra : Desher Chitra
রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০৭ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
বিএনপিকে হাসনাতের ইঙ্গিত: কাবিনে স্বাক্ষর করেছেন, সংসারও করতে হবে কুলাউড়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা জুলাই সনদে শেখ মুজিবের ছবি টাঙানোর বিধান অন্তর্ভুক্ত হয়নি, বিএনপির ক্ষোভ সংঘর্ষের রাজনীতি করলে আবার হাসিনার আমলে ফেরত যেতে হবে দুর্লভপুর ইউনাইটেড ক্লাবের নতুন কার্যকরী পরিষদ ঘোষণা – ২০২৫-২০২৭ আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুঁশিয়ারি শিশুকে চড়, বাবাকে গ্রেফতার: জেনেভা ক্যাম্পের ঘটনায় তদন্ত শুরু পারমাণবিক শক্তিতে চীন কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলছে রংপুরে চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা রাজধানীর মিরপুরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের চেষ্টা

বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ইউকে-তে পিএইচডি করার সঠিক পথ

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

শিক্ষা ডেস্ক

বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য ইউকে-তে পিএইচডি করা একটি স্বপ্নের মতো লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা করার সুযোগ, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও গবেষণা পরিবেশ, এবং বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক তৈরি করার সুযোগ, এই সবকিছু মিলিয়ে ইউকে আজকের দিনে শিক্ষার্থীদের কাছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। তবে এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে একটুখানি পরিকল্পনা, প্রস্তুতি এবং ধারাবাহিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

প্রথমেই শিক্ষার্থীদের অবশ্যই তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা মূল্যায়ন করতে হবে। ইউকে-তে পিএইচডি করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মাস্টার্স ডিগ্রি থাকা আবশ্যক। শুধু ডিগ্রি থাকা যথেষ্ট নয়, শিক্ষাগত ফলাফলও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে প্রাপ্তির ক্ষেত্রে First Class বা High Second Class গ্রেড থাকলে ভালো সুযোগ পাওয়া যায়। মাস্টার্সের সময় প্রাপ্ত গবেষণা অভিজ্ঞতা, প্রজেক্ট এবং প্রকাশনা থাকলে আবেদন আরও শক্তিশালী হয়।

ইংরেজি ভাষার দক্ষতা আরেকটি অপরিহার্য শর্ত। যদিও কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ই ভাষার ক্ষেত্রে কিছু নমনীয়তা দেখাতে পারে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের IELTS, TOEFL বা সমমানের পরীক্ষার স্কোর উপস্থাপন করতে হয়। সাধারণত IELTS Academic-এ ৬.৫–৭.০ বেন্ড রেটিং প্রয়োজন হয়, যেখানে স্পিকিং ও রাইটিংয়ে কমপক্ষে ৬.০–৬.৫ স্কোর থাকা ভালো। TOEFL iBT-এর ক্ষেত্রে ৯০–১০০ পয়েন্ট প্রযোজ্য। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় Duolingo English Test বা PTE Academic-ও গ্রহণ করে। এই ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ শিক্ষার্থীদের গবেষণার মৌলিক দক্ষতা ও আন্তর্জাতিক কমিউনিকেশনে সক্ষমতা নিশ্চিত করে।

পিএইচডি করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গবেষণার বিষয় এবং সুপারভাইজার নির্বাচন। গবেষণার বিষয়টি শিক্ষার্থীর আগ্রহ, পেশাগত লক্ষ্য এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। একবার বিষয় নির্ধারিত হলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি বা প্রফেসরদের প্রোফাইল খুঁজে দেখা এবং সম্ভাব্য সুপারভাইজারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ইমেইলে সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, গবেষণার আগ্রহ এবং সিভি সংযুক্ত করে আবেদন করলে স্বচ্ছ যোগাযোগ গড়ে ওঠে। সুপারভাইজারের প্রতিক্রিয়া শিক্ষার্থীর জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে।

আবেদন প্রক্রিয়ার সময় শিক্ষার্থীদের একটি ভালো কভার লেটার বা স্টেটমেন্ট অফ পারপাস (SOP) লিখতে হয়। এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, গবেষণার আগ্রহ এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কে বিস্তারিত লিখে। SOP একটি শিক্ষার্থীর উদ্দেশ্য, মনোভাব এবং গবেষণার দৃঢ়তা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে তুলে ধরে। পাশাপাশি সিভি বা রিজিউমে শিক্ষাগত তথ্য, প্রকাশনা, প্রজেক্ট ও ইন্টার্নশিপের তথ্য যুক্ত করতে হয়। আবেদনপত্রের সাথে দুটি বা তিনটি রেফারেন্স লেটার প্রয়োজন হয়, যা শিক্ষক, গবেষক বা প্রফেসরের মাধ্যমে প্রাপ্ত। এছাড়া শিক্ষার্থীকে তাদের মাস্টার্স ও ব্যাচেলর ডিগ্রির মার্কশিট ও সার্টিফিকেট, ইংরেজি দক্ষতার সার্টিফিকেটও জমা দিতে হয়।

ইউকে-তে পিএইচডি করার জন্য অর্থায়নের বিষয়ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ইউকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি ও জীবনযাত্রার খরচ মিলিয়ে প্রতি বছর ১৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ পাউন্ড খরচ হয়। তবে বিভিন্ন ধরনের ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক স্কলারশিপ যেমন UKRI, Commonwealth Scholarship, Chevening, Gates Cambridge ইত্যাদি সুযোগ প্রদান করে। এছাড়া কিছু শিক্ষার্থী নিজস্ব অর্থ বা পরিবারের সহায়তায় পিএইচডি করে থাকে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে Research Assistantship বা Teaching Assistantship-এর মাধ্যমে অংশকালীন কাজ করে খরচ মেটানোর সুযোগও থাকে।

ভিসার প্রক্রিয়া শিক্ষার্থীদের জন্য অপরিহার্য। সাধারণত Student visa (Tier 4) প্রয়োজন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার বা CAS (Confirmation of Acceptance for Studies) পেলে পাওয়া যায়। ভিসার জন্য ব্যাংক ব্যালান্সের প্রমাণ দিতে হয় যাতে দেখানো যায় যে শিক্ষার্থী নিজের থাকা ও খাওয়ার খরচ বহন করতে সক্ষম। এছাড়া পাসপোর্ট, ছবি ও ইংরেজি দক্ষতার প্রমাণ জমা দিতে হয়।

শুধু শিক্ষাগত ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি নয়, শিক্ষার্থীদের উচিত জীবনযাত্রা ও সাংস্কৃতিক দিকেও প্রস্তুতি নেওয়া। ইউকে-তে থাকার জন্য উপযুক্ত আবাসন ব্যবস্থা করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় হল বা প্রাইভেট ফ্ল্যাটের বিকল্প রয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য সাংস্কৃতিক অভিযোজন, নেটওয়ার্কিং এবং ছাত্র ইউনিয়ন ও কমিউনিটিতে অংশগ্রহণ গবেষণার মান ও সামাজিক সুসংযোগে সাহায্য করে।

অবশ্যই, সময়মত পরিকল্পনা করা অত্যন্ত জরুরি। পিএইচডি আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনের সময়সীমা ও ফান্ডিং অনুযায়ী ৩–৬ মাস আগে শুরু করা ভালো। পরিকল্পনা করলে শিক্ষার্থীরা ডকুমেন্ট প্রস্তুতি, সুপারভাইজার খোঁজা, ভিসা প্রক্রিয়া ও অর্থায়ন নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়।

শেষ পর্যন্ত, ইউকে-তে পিএইচডি করার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষাগত উৎকর্ষতা, আন্তর্জাতিক গবেষণার অভিজ্ঞতা এবং ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সুযোগ সৃষ্টি। সঠিক পরিকল্পনা, নির্ভুল প্রস্তুতি এবং ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা ইউকে-তে পিএইচডি সম্পূর্ণ সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হবে।

সঠিক তথ্য ও পরিকল্পনার সঙ্গে ধৈর্য ধরে এগোলেই শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক গবেষণার উচ্চমানের পরিবেশে নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবে। এটি শুধু একাডেমিক উৎকর্ষতা নয়, বরং ব্যক্তিগত ও পেশাগত উন্নতির এক বড় মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে।

Share this Post in Your Social Media

Comments are closed.

এই ধরনের আরও খবর
Copyright © 2025, সাপ্তাহিক দেশের চিত্র. All rights reserved.
Weekly Desher Chitra developed by LogoMyface