আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের কৌশলগত প্রতিবেশী নেপালে সহিংস বিক্ষোভের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির পদত্যাগ দেশটিতে নতুন অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। এ পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে দিল্লি, যা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সংকটকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে নেপালজুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জনেরও বেশি নিহত হন। পরে বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্টে হামলা চালায় এবং কয়েকজন রাজনীতিবিদের বাড়িতে আগুন ধরায়। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী নামানো হয় ও দেশব্যাপী কারফিউ জারি করা হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, “নেপালের সহিংসতা হৃদয়বিদারক। তরুণদের প্রাণহানি আমাকে ব্যথিত করেছে। নেপালের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সমৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” এ বিষয়ে তিনি মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন।
নেপালের সঙ্গে ভারতের ১,৭৫০ কিলোমিটারের বেশি খোলা সীমান্ত রয়েছে, যা উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, সিকিম, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত। আনুমানিক ৩৫ লাখ নেপালি ভারতে কাজ বা বসবাস করেন। ১৯৫০ সালের বিশেষ চুক্তির আওতায় তারা ভিসা ছাড়াই ভারতে যাতায়াত করতে পারেন। পাশাপাশি প্রায় ৩২ হাজার গুর্খা সেনা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত।
নেপালের মুকতিনাথ মন্দিরসহ বহু হিন্দু তীর্থস্থান ভারতীয় ভক্তদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে কাঠমাণ্ডু ভারতের রপ্তানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। দুই দেশের বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৮.৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোক মেহেতার মতে, নেপালের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ভারতের নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, কারণ চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড সীমান্তের ওপারেই অবস্থান করছে।
কে নতুন নেতৃত্বে আসবে তা এখনও অনিশ্চিত। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতকে অত্যন্ত সতর্কভাবে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশের মতো আরেকটি পরিস্থিতি তৈরি না হয়।
অতীতে নেপাল-ভারতের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ ছিল। ২০১৯ সালে ভারতের মানচিত্রে নেপালের দাবি করা এলাকা যুক্ত হওয়ায় উত্তেজনা তৈরি হয়। সম্প্রতি ভারত-চীন সীমান্তে বাণিজ্য পুনরায় শুরুর বিরুদ্ধেও নেপালের আপত্তি রয়েছে।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগীতা থাপলিয়াল মনে করেন, ভারত যদি তরুণ নেপালিদের জন্য শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ায়, তাহলে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সার্ক কার্যত অচল হয়ে পড়ায় প্রতিবেশী অঞ্চলে একের পর এক রাজনৈতিক অস্থিরতা ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেহেতার ভাষায়, “ভারত বড় শক্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সেটি অর্জনের আগে নিরাপদ ও স্থিতিশীল প্রতিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।”