1. info220@noreply0.com : anyamoorhouse1 :
  2. desherchitrabd@gmail.com : Desher DesherChitra : Desher Chitra
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:১২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
লিসবনে পর্তুগাল বিএনপির উদ্যোগে দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে নর্থ ইংল্যান্ড বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনের দাবি ডাকসুতে শিবির সমর্থিত প্যানেলের জয় পোল্যান্ডে রুশ ড্রোন হামলা ‘ইচ্ছাকৃত’, অভিযোগ জেলেনস্কির সিলেটে স্কুল শিক্ষিকার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, অপমৃত্যু মামলা হাটহাজারীতে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুন্নিদের সংঘর্ষে আহত ২০০, পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি একটিমাত্র ভুলে প্রিয় চা হয়ে উঠতে পারে বিষ! সিরাতুন্নবী (সা.): মানবতার চিরন্তন আদর্শ বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন ড্রেস কোড: জিন্স-গ্যাবাডিন নয়, নিষিদ্ধ শর্ট স্লিভ ও লেগিংস জার্মানির এসেনে শিক্ষককে ছুরিকাঘাত: গ্রেপ্তারের সময় ১৭ বছরের সন্দেহভাজন গুলিবিদ্ধ

আগস্ট ২০২৪ থেকে আগস্ট ২০২৫ এ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর হামলা: প্রেক্ষাপট, পরিসংখ্যান ও প্রতিক্রিয়া

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫

দেশের চিত্র ডেস্ক

২০২৪ সালের আগস্ট মাস বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকারের পতনের পরবর্তী সময়টিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর ধারাবাহিকভাবে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি, উপাসনালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা এবং সরকারি তদন্ত প্রতিবেদন এসব ঘটনার ভয়াবহতা তুলে ধরেছে। এই প্রতিবেদনে আগস্ট ২০২৪ থেকে আগস্ট ২০২৫ সময়কালের সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক অস্থিরতা

২০২৪ সালের প্রথম দিকে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে, যা শুরু হয় নতুন ভাবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের মাধ্যমে । এরপর দেশজুড়ে একধরনের প্রশাসনিক শূন্যতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্থবিরতা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আবহ তৈরি হয়। এই সুযোগে কিছু উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের উপর সংগঠিত ও পরিকল্পিত হামলা চালায়। হামলাগুলো শুধু বিচ্ছিন্নভাবে সংঘটিত হয়নি, বরং একে অপরের সঙ্গে সমন্বিত হয়ে একটি ভয়াবহ চিত্র সৃষ্টি করেছে।

সংখ্যালঘুদের উপর হামলার পরিসংখ্যান

ভিবিন্ন অনুসন্ধানে দেখা যায় , আগস্ট ২০২৪ মাসের ৫ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৯টিতেই সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে।

১,০৬৮টি ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আক্রান্ত বা ধ্বংস হয়।

২২টি উপাসনালয়ে (মন্দির, গির্জা, বিহার) আক্রমণ চালানো হয়।

২ জন সংখ্যালঘু নিহত হন — মৃণাল কান্তি চ্যাটার্জি (বাগেরহাট) ও স্বপন কুমার বিশ্বাস (খুলনা)।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মতে, আগস্ট ২০২৪ থেকে পরবর্তী এক বছরে ৪৫টি জেলায় অন্তত ২,০১০টি হামলার ঘটনা ঘটে এবং ৫ জন হিন্দু নিহত হন।

সরকারি ও পুলিশি তদন্তের অগ্রগতি

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে ১,২৩৪টি ঘটনার তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যার মধ্যে ২০টি হামলা সরাসরি সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রসূত, বাকিগুলো রাজনৈতিক সহিংসতা হিসেবে চিহ্নিত।

৬২টি ঘটনায় মামলা হয়েছে।

৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও র‍্যাব ঘটনার তদন্ত করছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের অভিজ্ঞতা ও মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবাদ :

ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর অনেকেই আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় ভয়ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতায় তারা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। চট্টগ্রাম, খুলনা, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা জানান, “আমরা ১৯৭১-এর যুদ্ধের পর এমন ভয় দেখিনি।”

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, অধিকার, আসিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ—সবাই একযোগে এই হামলার নিন্দা জানায়।

অ্যামনেস্টি জানায়, “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর এ ধরনের কাঠামোগত ও পরিকল্পিত হামলা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানায়।

বিশেষ করে ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়ায় এই ঘটনাগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার পায়, যার ফলে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক স্তরে উদ্বেগ জানানো হয়।

সরকারি প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ

নতুন প্রশাসন এ ঘটনাগুলোকে ‘বিচ্ছিন্ন’ বলে দাবি করলেও, ব্যাপক গণমাধ্যম কাভারেজ ও নাগরিক সমাজের চাপের মুখে সরকার তদন্তের নির্দেশ দেয় এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেয়। কিছু এলাকায় পুনর্বাসন কাজ শুরু হলেও অধিকাংশ জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবাররা এখনো সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় নেতাদের সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রতিরোধে সাইবার মনিটরিং জরুরি।

পাশাপাশি, সংখ্যালঘুদের উপর হামলার ঘটনায় দ্রুত বিচার, ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যতে এমন হামলা পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে।
হামলায় জড়িতদের পরিচয় ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা
এই সময়কালের সংখ্যালঘুদের উপর হামলার পেছনে মূলত দুটি স্তরের গোষ্ঠী সক্রিয় ছিল:

উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী:
বিভিন্ন ধর্মীয় উগ্রপন্থী গোষ্ঠী যাদের অতীতেও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের ইতিহাস রয়েছে। এসব গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে সহিংসতা উসকে দেয়।

পূর্বতন ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মী:
কিছু হামলায় দেখা গেছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা বা তাদের অনুসারীরা সম্পত্তি দখল, প্রতিশোধমূলক প্রতিহিংসা বা গোষ্ঠীগত আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা চালিয়েছে।

বিশেষ করে সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, ঠাকুরগাঁও, খুলনা ও বরিশালের ঘটনায় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

কিছু ঘটনায় পুলিশের নথিতে ক্ষমতাসীন দল বা বিরোধী দলের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের নাম উঠে এসেছে।

৬২টি মামলার মধ্যে অন্তত ১৯টি মামলায় স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নাম রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়।

সম্পত্তি লোভী দখলদার গোষ্ঠী:
কিছু হামলা ছিল পরিকল্পিত সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে, যেখানে সংখ্যালঘুদের এলাকা থেকে উৎখাত করে জমি-বাড়ি দখলের চেষ্টা ছিল মূল লক্ষ্য।

সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা
“ফেসবুক” ও “টিকটক” সহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ছড়ানো গুজব, বিকৃত ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে জনমনে ক্ষোভ জাগিয়ে হামলা সংগঠিত করা হয়। সাইবার ক্রাইম ইউনিট ইতোমধ্যে কয়েকটি ফেক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করে।

২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়কালে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর সংঘটিত হামলা কেবল মানবাধিকারের প্রশ্ন নয়, বরং তা আমাদের জাতীয় পরিচয়, নৈতিকতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার ওপর এক গুরুতর আঘাত। এই ঘটনার সঠিক তদন্ত, বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো এখন কেবল সরকারের দায়িত্ব নয়, বরং সমাজের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব।

Share this Post in Your Social Media

One response to “আগস্ট ২০২৪ থেকে আগস্ট ২০২৫ এ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর হামলা: প্রেক্ষাপট, পরিসংখ্যান ও প্রতিক্রিয়া”

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এই ধরনের আরও খবর
Copyright © 2025, সাপ্তাহিক দেশের চিত্র. All rights reserved.
Weekly Desher Chitra developed by LogoMyface