মাওলানা মুহাম্মদ জাকির হোসাইন
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে। সাধারণভাবে যখন আমরা ‘পর্দা’ শব্দটি ব্যবহার করি, তখন অনেকেই মনে করেন এটি কেবল নারীদের জন্য নির্ধারিত। বাস্তবে ইসলাম যেমন নারীদের জন্য পর্দার বিধান দিয়েছে, তেমনি পুরুষদের জন্যও কিছু পর্দার বিধান রেখেছে। তবে দুই লিঙ্গের ক্ষেত্রে এ বিধানের ধরন, সীমা ও প্রয়োগ ভিন্ন। পুরুষের পর্দা বলতে মূলত শরীর আচ্ছাদন, দৃষ্টি সংযম, আচরণে শালীনতা এবং চরিত্রের পবিত্রতা বোঝানো হয়েছে।
পর্দার মৌলিক ধারণা
‘পর্দা’ অর্থ আড়াল, গোপন, সংযম ও নিয়ন্ত্রণ। ইসলামী পরিভাষায় পর্দা বলতে বোঝানো হয়—আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী শরীরের নির্দিষ্ট অংশ আচ্ছাদিত রাখা এবং দৃষ্টি ও আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা। পুরুষের জন্য এ পর্দা হলো:
শরীর আচ্ছাদনের বিধান
পুরুষের জন্য ন্যূনতম পর্দা হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ আচ্ছাদিত রাখা। ইসলামী শরীয়তে এ অংশকে ‘আওরাত’ বলা হয়।
কোরআনের নির্দেশনা
আল্লাহ তা’আলা বলেন—
“হে মুমিন পুরুষগণ! তোমরা তোমাদের দৃষ্টি সংযত রাখ এবং তোমাদের লজ্জাস্থান হেফাজত কর। এতে তাদের জন্য আছে পরিশুদ্ধতা।” (সূরা আন-নূর: ৩০)
এ আয়াতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে পুরুষকে দৃষ্টি নত রাখা এবং লজ্জাস্থান হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায়, পুরুষের শরীর আচ্ছাদন করা যেমন ফরজ, তেমনি দৃষ্টি সংযমও অপরিহার্য।
হাদিসের নির্দেশনা
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“পুরুষের আওরাত হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত।” (সুনান আবু দাউদ, তিরমিজি)
অন্য হাদিসে আছে—
“তোমাদের কেউ যেন অন্যের আওরাতের দিকে তাকাবে না এবং পুরুষ যেন আরেক পুরুষের শরীরের সাথে শরীর মিলিয়ে এক কাপড়ে শয়ন না করে।” (সহিহ মুসলিম)
পুরুষের জন্য পোশাকের শালীনতা
পুরুষের পোশাকে কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে:
দৃষ্টি সংযম
পুরুষদের জন্য অন্যতম বড় পর্দার বিধান হলো দৃষ্টি সংযম। কোরআনে স্পষ্টভাবে মুমিন পুরুষদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ এসেছে—
“তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে।” (সূরা আন-নূর: ৩০)
রাসূল ﷺ বলেছেন—
“প্রথম দৃষ্টি তোমার জন্য মাফ আছে, কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি তোমার বিরুদ্ধে।” (তিরমিজি)
অতএব, অশ্লীল দৃশ্য, অশালীনতা বা পরনারীর দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকানো ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
আচরণে শালীনতা
পর্দা শুধু শরীর আচ্ছাদন বা দৃষ্টি সংযমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পুরুষদের জন্য আচরণেও পর্দার বিধান আছে।
সামাজিক জীবনে পুরুষের পর্দা
পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ কিছু কাজ
আধুনিক যুগে পুরুষদের পর্দার চ্যালেঞ্জ
বর্তমান সময়ে পুরুষদের পর্দা রক্ষা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় পুরুষদের জন্য জরুরি হলো:
পুরুষের পর্দা রক্ষার উপকারিতা
ইসলামে পর্দা কেবল নারীর জন্য নয়, বরং পুরুষের জন্যও অপরিহার্য বিধান। নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীর আচ্ছাদন করা, দৃষ্টি সংযম রাখা, পোশাকে শালীনতা বজায় রাখা এবং নারীদের সঙ্গে আচরণে সতর্ক থাকা—এসবই পুরুষের জন্য পর্দার অন্তর্ভুক্ত। আধুনিক যুগে নানা প্রলোভন ও চ্যালেঞ্জের মধ্যে থেকেও মুসলিম পুরুষদের উচিত এ বিধান মেনে চলা। কারণ এর মাধ্যমেই ব্যক্তিগত চরিত্র, পারিবারিক শান্তি এবং সামাজিক পবিত্রতা প্রতিষ্ঠিত হবে।