1. info220@noreply0.com : anyamoorhouse1 :
  2. desherchitrabd@gmail.com : Desher DesherChitra : Desher Chitra
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৯ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
লিসবনে পর্তুগাল বিএনপির উদ্যোগে দলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতে নর্থ ইংল্যান্ড বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনের দাবি ডাকসুতে শিবির সমর্থিত প্যানেলের জয় পোল্যান্ডে রুশ ড্রোন হামলা ‘ইচ্ছাকৃত’, অভিযোগ জেলেনস্কির সিলেটে স্কুল শিক্ষিকার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, অপমৃত্যু মামলা হাটহাজারীতে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুন্নিদের সংঘর্ষে আহত ২০০, পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি একটিমাত্র ভুলে প্রিয় চা হয়ে উঠতে পারে বিষ! সিরাতুন্নবী (সা.): মানবতার চিরন্তন আদর্শ বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন ড্রেস কোড: জিন্স-গ্যাবাডিন নয়, নিষিদ্ধ শর্ট স্লিভ ও লেগিংস জার্মানির এসেনে শিক্ষককে ছুরিকাঘাত: গ্রেপ্তারের সময় ১৭ বছরের সন্দেহভাজন গুলিবিদ্ধ

ইসলামে পুরুষদের পর্দার বিধান

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৫

 মাওলানা মুহাম্মদ জাকির হোসাইন

ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে। সাধারণভাবে যখন আমরা ‘পর্দা’ শব্দটি ব্যবহার করি, তখন অনেকেই মনে করেন এটি কেবল নারীদের জন্য নির্ধারিত। বাস্তবে ইসলাম যেমন নারীদের জন্য পর্দার বিধান দিয়েছে, তেমনি পুরুষদের জন্যও কিছু পর্দার বিধান রেখেছে। তবে দুই লিঙ্গের ক্ষেত্রে এ বিধানের ধরন, সীমা ও প্রয়োগ ভিন্ন। পুরুষের পর্দা বলতে মূলত শরীর আচ্ছাদন, দৃষ্টি সংযম, আচরণে শালীনতা এবং চরিত্রের পবিত্রতা বোঝানো হয়েছে।

পর্দার মৌলিক ধারণা

‘পর্দা’ অর্থ আড়াল, গোপন, সংযম ও নিয়ন্ত্রণ। ইসলামী পরিভাষায় পর্দা বলতে বোঝানো হয়—আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী শরীরের নির্দিষ্ট অংশ আচ্ছাদিত রাখা এবং দৃষ্টি ও আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা। পুরুষের জন্য এ পর্দা হলো:

  1. শরীরের নির্দিষ্ট অংশ আচ্ছাদন।
  2. দৃষ্টি সংযম রাখা।
  3. আচরণে শালীনতা বজায় রাখা।

শরীর আচ্ছাদনের বিধান

পুরুষের জন্য ন্যূনতম পর্দা হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ আচ্ছাদিত রাখা। ইসলামী শরীয়তে এ অংশকে ‘আওরাত’ বলা হয়।

কোরআনের নির্দেশনা

আল্লাহ তা’আলা বলেন—

“হে মুমিন পুরুষগণ! তোমরা তোমাদের দৃষ্টি সংযত রাখ এবং তোমাদের লজ্জাস্থান হেফাজত কর। এতে তাদের জন্য আছে পরিশুদ্ধতা।” (সূরা আন-নূর: ৩০)

এ আয়াতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে পুরুষকে দৃষ্টি নত রাখা এবং লজ্জাস্থান হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায়, পুরুষের শরীর আচ্ছাদন করা যেমন ফরজ, তেমনি দৃষ্টি সংযমও অপরিহার্য।

হাদিসের নির্দেশনা

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“পুরুষের আওরাত হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত।” (সুনান আবু দাউদ, তিরমিজি)

অন্য হাদিসে আছে—
“তোমাদের কেউ যেন অন্যের আওরাতের দিকে তাকাবে না এবং পুরুষ যেন আরেক পুরুষের শরীরের সাথে শরীর মিলিয়ে এক কাপড়ে শয়ন না করে।” (সহিহ মুসলিম)

পুরুষের জন্য পোশাকের শালীনতা

পুরুষের পোশাকে কিছু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে:

  1. সিল্কের কাপড় ব্যবহার নিষিদ্ধ।
    রাসূল ﷺ বলেছেন, “এ দুটি (সোনা ও রেশম) আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম এবং নারীদের জন্য হালাল।” (আবু দাউদ)
  2. সোনার অলংকার নিষিদ্ধ।
  3. অতিরিক্ত বিলাসিতা, অহংকার বা দম্ভ প্রকাশকারী পোশাক ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
  4. পোশাক স্বচ্ছ বা শরীরের গঠন প্রকাশকারী হওয়া যাবে না।

দৃষ্টি সংযম

পুরুষদের জন্য অন্যতম বড় পর্দার বিধান হলো দৃষ্টি সংযম। কোরআনে স্পষ্টভাবে মুমিন পুরুষদের উদ্দেশ্যে নির্দেশ এসেছে—

“তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে।” (সূরা আন-নূর: ৩০)

রাসূল ﷺ বলেছেন—
“প্রথম দৃষ্টি তোমার জন্য মাফ আছে, কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টি তোমার বিরুদ্ধে।” (তিরমিজি)

অতএব, অশ্লীল দৃশ্য, অশালীনতা বা পরনারীর দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকানো ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

আচরণে শালীনতা

পর্দা শুধু শরীর আচ্ছাদন বা দৃষ্টি সংযমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পুরুষদের জন্য আচরণেও পর্দার বিধান আছে।

  • নারীদের সঙ্গে অযথা মেলামেশা, হাসি-তামাশা বা নির্জন অবস্থায় থাকা হারাম।
  • রাসূল ﷺ বলেছেন—
    “কোনো পুরুষ যেন কোনো মহিলার সাথে একান্তে না থাকে; কারণ তৃতীয়জন হয় শয়তান।” (তিরমিজি)

সামাজিক জীবনে পুরুষের পর্দা

  1. মসজিদে: জামাতে সালাত আদায়ের সময় শরীরের পর্দা রক্ষা করা ফরজ। অনেক সময় অনেকে কাপড় গুটিয়ে রাখেন বা ছোট জামা পরেন, যা নাভি-হাঁটু আচ্ছাদন করে না—এটি বৈধ নয়।
  2. সমাজে: আলাপচারিতায় নারীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ পরিহার করতে হবে।
  3. কর্মস্থলে: পোশাক পরিচ্ছন্ন, শালীন ও ইসলামী নীতিসম্মত হওয়া জরুরি।

পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ কিছু কাজ

  • নারীদের পোশাকের অনুকরণ করা।
  • শরীর প্রদর্শনমূলক খেলা বা ক্রীড়া করা, যেখানে আওরাত প্রকাশিত হয়।
  • ফ্যাশনের নামে অর্ধনগ্ন হয়ে চলাফেরা।
  • মাদক, নেশা বা অশ্লীলতায় জড়িয়ে পড়া, যা পর্দার বিপরীতে যায়।

আধুনিক যুগে পুরুষদের পর্দার চ্যালেঞ্জ

বর্তমান সময়ে পুরুষদের পর্দা রক্ষা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।

  1. মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়া: অশ্লীল ছবি ও ভিডিও সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।
  2. ফ্যাশন সংস্কৃতি: পুরুষরা অশ্লীল পোশাকে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।
  3. অর্থনৈতিক ও কর্মজীবন: মিশ্র পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে দৃষ্টি সংযম ভঙ্গ হয়।

এ অবস্থায় পুরুষদের জন্য জরুরি হলো:

  • আল্লাহভীতি হৃদয়ে জাগ্রত রাখা।
  • সালাত, কুরআন পাঠ ও জিকিরের মাধ্যমে ঈমান শক্তিশালী করা।
  • পরিবেশ বাছাই করা এবং খারাপ সঙ্গ এড়িয়ে চলা।

পুরুষের পর্দা রক্ষার উপকারিতা

  1. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।
  2. চরিত্রের পবিত্রতা।
  3. পরিবার ও সমাজে শালীনতা বজায় রাখা।
  4. ব্যভিচার, অশ্লীলতা ও নৈতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা।

ইসলামে পর্দা কেবল নারীর জন্য নয়, বরং পুরুষের জন্যও অপরিহার্য বিধান। নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীর আচ্ছাদন করা, দৃষ্টি সংযম রাখা, পোশাকে শালীনতা বজায় রাখা এবং নারীদের সঙ্গে আচরণে সতর্ক থাকা—এসবই পুরুষের জন্য পর্দার অন্তর্ভুক্ত। আধুনিক যুগে নানা প্রলোভন ও চ্যালেঞ্জের মধ্যে থেকেও মুসলিম পুরুষদের উচিত এ বিধান মেনে চলা। কারণ এর মাধ্যমেই ব্যক্তিগত চরিত্র, পারিবারিক শান্তি এবং সামাজিক পবিত্রতা প্রতিষ্ঠিত হবে।

Share this Post in Your Social Media

Comments are closed.

এই ধরনের আরও খবর
Copyright © 2025, সাপ্তাহিক দেশের চিত্র. All rights reserved.
Weekly Desher Chitra developed by LogoMyface