অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা ও হয়রানি বেড়ে যাওয়ায় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ভয় ও অনিশ্চয়তার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্না।
গত ২৮ আগস্ট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-তে মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় মব হামলার শিকার হন তিনি। ওই ঘটনায় সাংবাদিকসহ একাধিক ব্যক্তি আহত হলেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো সাংবাদিক পান্নাসহ ১৬ জনকে সন্ত্রাস দমন আইনের মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন ও সাংবাদিক মাহবুব কামালসহ অনেকে সেই দিনের আতঙ্কের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। মাহবুব কামাল জানান, তিনি প্রায় আড়াই ঘণ্টা একটি কক্ষে লুকিয়ে ছিলেন।
এদিকে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ এবং বিভিন্ন জেলা শহরে দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। জুলাই আন্দোলনের সময় দুই দিনে ২৫ জন সাংবাদিক আক্রান্ত হন।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২৭৪ জন সাংবাদিক হামলা ও মামলার শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৩ জন সাংবাদিক দায়িত্ব পালনকালে নির্যাতিত হয়েছেন, ১১ জন হত্যার হুমকি পেয়েছেন এবং ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের সংস্কৃতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)। টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরও সাংবাদিকদের হয়রানি, বরখাস্ত এবং মব আতঙ্ক অব্যাহত রয়েছে।
আরএসএফ জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিশ্ব সংবাদমাধ্যম স্বাধীনতা সূচকে ১৬ ধাপ এগোলেও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংগঠিত গোষ্ঠীগুলো সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে বলেও তারা উল্লেখ করেছে।
মানবাধিকারকর্মী নূর খান বলেছেন, ‘‘এখন যে-কোনো সাংবাদিককে যেকোনো সময় আটক করা হতে পারে।’’
সিনিয়র সাংবাদিক আনিস আলমগীর মনে করেন, মব-সন্ত্রাসকে কেউ কেউ ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে দেখানোয় এই হামলার সংস্কৃতি উৎসাহিত হচ্ছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় হামলাকারীরা বারবার উৎসাহ পাচ্ছে।’’
সাংবাদিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, হামলা-মামলার এই পরিবেশ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে