1. info220@noreply0.com : anyamoorhouse1 :
  2. desherchitrabd@gmail.com : Desher DesherChitra : Desher Chitra
রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:১৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সিলেটে স্কুল শিক্ষিকার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, অপমৃত্যু মামলা হাটহাজারীতে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুন্নিদের সংঘর্ষে আহত ২০০, পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি একটিমাত্র ভুলে প্রিয় চা হয়ে উঠতে পারে বিষ! সিরাতুন্নবী (সা.): মানবতার চিরন্তন আদর্শ বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন ড্রেস কোড: জিন্স-গ্যাবাডিন নয়, নিষিদ্ধ শর্ট স্লিভ ও লেগিংস জার্মানির এসেনে শিক্ষককে ছুরিকাঘাত: গ্রেপ্তারের সময় ১৭ বছরের সন্দেহভাজন গুলিবিদ্ধ ডাকসু নির্বাচন ২০২৫: শিক্ষার্থীরা কাকে চান নেতৃত্বে ? জরিপে চমকপ্রদ ইঙ্গিত জাপা কার্যালয়ে হামলা-অগ্নিকাণ্ড: গণঅধিকার পরিষদের নিবন্ধন বাতিলের দাবি রাজবাড়ীতে উত্তেজনা: নুরাল পাগলার কবর ভাঙচুর, লাশ তুলে আগুন বাচ্চাদের জন্ডিস হলে করণীয়

সিরাতুন্নবী (সা.): মানবতার চিরন্তন আদর্শ

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ধর্ম

মানব ইতিহাসে অসংখ্য মহান ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটেছে। তবে তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তাঁর জীবন ও আদর্শই হলো মানবতার পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা। তিনি ছিলেন একাধারে আদর্শ মানুষ, সফল দাঈ, ন্যায়পরায়ণ শাসক, স্নেহশীল স্বামী ও পিতা, সমাজ সংস্কারক এবং আধ্যাত্মিক নেতা। তাঁর জীবনবৃত্তান্ত, শিক্ষা, দাওয়াত ও সংগ্রামকে সমষ্টিগতভাবে বলা হয় সিরাতুন্নবী (সা.)। এটি কেবল একটি ঐতিহাসিক দলিল নয়, বরং সার্বজনীন জীবনবিধান, যা যুগে যুগে মানুষের কল্যাণের দিশা দেখিয়েছে।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। এ বছরকে আমুল ফীল বা হাতির বছর বলা হয়, কারণ সে বছর ইয়েমেনের শাসক আব্রাহা হাতির বাহিনী নিয়ে কাবা শরীফ ধ্বংস করতে এসেছিল, যা আল্লাহর কুদরতে ব্যর্থ হয়। জন্মের পূর্বেই তিনি পিতৃহারা হন এবং মাত্র ছয় বছর বয়সে মাতৃহারা হয়ে পড়েন। এরপর দাদা আবদুল মুত্তালিব ও পরে চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হতে থাকেন। শৈশব থেকেই তিনি সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য পরিচিত হন। এজন্য আরববাসী তাঁকে আল-আমীন বা বিশ্বস্ত উপাধি দেয়।

যৌবনে তিনি বাণিজ্যে যুক্ত হন এবং সততা ও দক্ষতার কারণে সবার আস্থা অর্জন করেন। খ্যাতনামা ব্যবসায়ী খাদিজা (রা.) তাঁর সততায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে নিজের বাণিজ্যের দায়িত্ব দেন। কিছুদিন পর তাঁদের মধ্যে বিবাহ সম্পন্ন হয় এবং সংসার সুখের পরিবেশে চলতে থাকে। এই পারিবারিক জীবনে তিনি শান্তি ও প্রশান্তি খুঁজে পান, যা পরবর্তীতে নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনে তাঁকে শক্তি জুগিয়েছিল।

৪০ বছর বয়সে মক্কার হেরা গুহায় ধ্যানরত অবস্থায় আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর কাছে প্রথম ওহী নাযিল হয়। ফেরেশতা জিবরাঈল (আ.) এসে তাঁকে “ইকরা” অর্থাৎ “পড়” বলে আহ্বান জানান। এভাবেই নবুওয়াতের সূচনা হয়। নবী করীম (সা.) মানবজাতিকে এক আল্লাহর ইবাদতে আহ্বান জানাতে শুরু করেন। তিনি মানুষকে শিরক, কুসংস্কার ও অন্যায়ের অন্ধকার থেকে মুক্ত করে তাওহীদ, ন্যায় ও কল্যাণের পথে ডেকে আনেন।

মক্কা যুগ ছিল ত্যাগ ও সংগ্রামের যুগ। শুরুতে তিনি গোপনে, পরে প্রকাশ্যে দাওয়াত দেন। তাঁর দাওয়াতের প্রতি সাড়া দিয়ে দরিদ্র, দাস, নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে। এতে কুরাইশ নেতারা ক্ষুব্ধ হয়ে নবী করীম (সা.) ও তাঁর সাহাবীদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন শুরু করে। মুসলমানরা সামাজিকভাবে বয়কটের শিকার হয় এবং বহু কষ্টে জীবনযাপন করতে হয়। এ অবস্থায় কিছু সাহাবী নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। নবী করীম (সা.) নিজে শা’বে আবু তালিবে দীর্ঘ তিন বছর অবরুদ্ধ জীবন কাটান।

পরবর্তীতে আল্লাহর নির্দেশে তিনি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। এটি ইসলামের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। মদিনায় পৌঁছে তিনি প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। সেখানে মুসলমান, ইহুদি ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সহাবস্থান ও শান্তি বজায় রাখার জন্য মদিনা সনদ প্রণয়ন করেন। এ সময় তিনি সমাজ সংস্কার, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্র পরিচালনায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

মদিনা যুগে নবী করীম (সা.)-এর জীবন ছিল দাওয়াত, শিক্ষা, সংগ্রাম ও নেতৃত্বে পরিপূর্ণ। বদর, উহুদ, খন্দকসহ বিভিন্ন যুদ্ধে তিনি নেতৃত্ব দেন এবং সাহস, প্রজ্ঞা ও ধৈর্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। একইসঙ্গে তিনি মুসলমানদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন এবং নামাজ, রোজা, যাকাত ও হজসহ ইসলামের মৌলিক বিধানগুলোকে কার্যকর করেন। তাঁর চরিত্র ছিল দয়ালু, বিনয়ী ও ক্ষমাশীল। যারা তাঁকে নির্যাতন করেছিল, তাঁদের প্রতিও তিনি দয়ার হাত প্রসারিত করেছেন। মক্কা বিজয়ের সময় তিনি শত্রুদের প্রতি যে মহান ক্ষমাশীলতা দেখিয়েছেন, তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল।

হিজরি দশম সালে তিনি বিদায় হজ পালন করেন। এ সময় তাঁর বিখ্যাত বিদায়ী খুতবায় মানবতার সার্বজনীন শিক্ষা ঘোষণা করা হয়। তিনি বলেন, সব মানুষ সমান, বর্ণ, গোত্র বা ধন-সম্পদে কারো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। নারী-পুরুষ উভয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সর্বোপরি, কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা আঁকড়ে ধরাই মুক্তির পথ।

অবশেষে হিজরি ১১ সালের রবিউল আউয়াল মাসে ৬৩ বছর বয়সে নবী করীম (সা.) ইন্তেকাল করেন। তাঁর ইন্তেকালে সমগ্র মানবজাতি শোকাহত হয়। তবে তাঁর রেখে যাওয়া শিক্ষা ও আদর্শ আজও মানবতার জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে আছে।

সিরাতুন্নবী (সা.) আমাদের জন্য এক পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। ব্যক্তিগত জীবনে এটি সততা, ধৈর্য ও আমানতদারির শিক্ষা দেয়; পারিবারিক জীবনে ভালোবাসা, শান্তি ও দায়িত্বশীলতার শিক্ষা দেয়; সামাজিক জীবনে ন্যায়বিচার, সমতা, দাসমুক্তি ও দরিদ্রদের প্রতি সহানুভূতির শিক্ষা দেয়; আর রাষ্ট্রীয় জীবনে ন্যায়ভিত্তিক নেতৃত্ব, চুক্তি রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের শিক্ষা দেয়। এমনকি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতিতেও তাঁর জীবন আমাদের জন্য দিকনির্দেশক।

পরিশেষে বলা যায়, সিরাতুন্নবী (সা.) কেবল মুসলমানদের জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য কল্যাণকর দিকনির্দেশনা। তাঁর জীবন ও আদর্শের অনুসরণেই পৃথিবীতে শান্তি, ন্যায়বিচার ও মানবতার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তাই আমাদের কর্তব্য হলো নবী করীম (সা.)-এর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের জীবন গড়ে তোলা এবং সমাজ ও বিশ্বকে আলোকিত করা।

Share this Post in Your Social Media

Comments are closed.

এই ধরনের আরও খবর
Copyright © 2025, সাপ্তাহিক দেশের চিত্র. All rights reserved.
Weekly Desher Chitra developed by LogoMyface