দেশের চিত্র ডেস্ক
অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি। প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে—কিছু উপদেষ্টা প্রশাসন ও জনপ্রশাসনবিষয়ক সিদ্ধান্তে দলীয় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। ফলে কারা বিতর্কিত, কেন এমন অভিযোগ—তা এখন রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পৃথক বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা এসব অভিযোগ আনেন।
বিএনপি অভিযোগ করেছে, প্রশাসন ও পুলিশে বদলি–পদায়নে জামায়াতঘনিষ্ঠ কিছু উপদেষ্টা সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। অপরদিকে জামায়াতের দাবি, বিএনপিপন্থী কিছু উপদেষ্টা প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করছেন। এনসিপির অভিযোগও প্রায় একই—বড় দুটি দল প্রশাসনে ‘ভাগ-বাটোয়ারা’ করছে উপদেষ্টা পরিষদের সহায়তায়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের শীর্ষ নেতারা মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠকে তারা নির্দিষ্ট কয়েকজন উপদেষ্টার নাম উল্লেখ করে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন। তাদের অভিযোগের তালিকায় প্রথমে রয়েছেন জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, যিনি প্রশাসন বদলি–পদায়ন সংক্রান্ত কেবিনেট কমিটির সদস্য। একই কমিটির অপর সদস্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধেও বিএনপির পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ রয়েছে।
বিএনপি আরও অভিযোগ করেছে, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নির্দিষ্ট দলের পক্ষে কাজ করছেন। পাশাপাশি ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দলটি।
বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, যেসব উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তাদের অপসারণের দাবি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানিয়েছেন।
তবে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান পাল্টা মন্তব্যে বলেন, “যেহেতু বড় সব দলই অভিযোগ করছে, তাতে বোঝা যায় সরকার নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে।”
অন্যদিকে বিএনপি আরও বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আদলে কাজ করে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারকে নিরপেক্ষভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো পরিচালনা করতে হবে।”
জামায়াতও বুধবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়। দলটির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের। বৈঠকের পর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, তারা আপাতত কোনো নাম প্রকাশ না করে সরকারকে সতর্ক করেছেন। তবে জামায়াতের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের ভূমিকাও তাদের প্রশ্নের মধ্যে রয়েছে।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও প্রশাসনে পদায়ন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “বড় দলগুলোর ভাগ-বাটোয়ারায় উপদেষ্টা পরিষদের ভেতর থেকেই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদের মতে, বড় দলগুলো প্রশাসনে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চাইছে। তাই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তারা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কৌশল নিচ্ছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা