1. desherchitrabd@gmail.com : Desher DesherChitra : Desher Chitra
রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা: চিকিৎসক বাংলাদেশ পুলিশের দুর্নীতি: নতুন সরকারের দায়িত্ব ও জনমতের চাপ মৌলভীবাজারে লাইফলাইন হাসপাতালে অনিয়ম ও অবহেলার অভিযোগ ছাত্রদলের কমিটি গঠনে ২০ লাখ টাকা লেনদেনের অভিযোগ দক্ষিণ সুরমায় সাংবাদিকের বাসায় হামলা: ভাঙচুর, মারধর ও লুটপাট লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাচ্ছেন ডা. জুবাইদা খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন কি না—চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চিকিৎসকদের: মির্জা ফখরুল বাংলাদেশে কারও নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই,তারেক রহমানের ফেরাকে ঘিরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আশ্বাস জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপিতে যোগদানের ঢল: মির্জা ফখরুল ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে কেন্দ্র করে যুবদল নেতাকে মারধরের অভিযোগ, কাঠগড়ায় সিআইডি কর্মকর্তা

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষকে অপমানের পরিণতি ও শাস্তি: কুরআন-হাদিসের আলোকে বিশ্লেষণ

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর, ২০২৫

ধর্ম

মানুষকে অপমান করা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ। এ অপরাধ শুধু সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে না, বরং আল্লাহর কাছে গভীর গোনাহ হিসেবেও বিবেচিত হয়। ইসলামের মূল শিক্ষাই হলো মানবিক মর্যাদা রক্ষা, মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং কথাবার্তায় ভদ্রতা বজায় রাখা। তাই কুরআন ও হাদিসে মানুষের সম্মানহানি, গালি-গালাজ, কটূক্তি, হেয়প্রতিপন্ন করা এবং অপমান করাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এসব অপরাধকারীদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে।

ইসলামের মূল দর্শনে মানুষের মর্যাদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ সম্মানিত সৃষ্টি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কুরআনে বলা হয়েছে “আমি আদম সন্তানকে সম্মানিত করেছি।” (সূরা আল-ইসরাআ: ৭০)। এই ঘোষণা স্পষ্ট করে যে মানুষের প্রতি অপমান ইসলামের মূলনীতির বিরোধিতা। তাই কোনো ব্যক্তি অহেতুক কিংবা বিদ্বেষবশত অন্যকে অপমান করলে সে সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করে। কুরআন মানুষের অন্তর্নিহিত মর্যাদা রক্ষার জন্য শুধু শারীরিক ক্ষতি নয়, বরং মানসিক আঘাতের বিরুদ্ধেও কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে।

কুরআনে স্পষ্টভাবে মানুষকে অপমান, উপহাস ও বিদ্রূপের নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আল্লাহ বলেন— “হে মুমিনগণ! তোমরা একে অন্যকে উপহাস করো না; কারণ হতে পারে, উপহাসকারীরাই তাদের থেকে উত্তম নয়। তোমরা একে অন্যকে তিরস্কার করো না এবং একে অন্যকে অপমানজনক উপনামে ডাকো না।” (সূরা আল-হুজুরাত: ১১)। এই আয়াত ইসলামে শিষ্টাচারের ভিত্তি স্থাপন করেছে। আল্লাহ জানাচ্ছেন ,অপরকে হেয় করা কিংবা উপহাস করা শুধু নৈতিকভাবে ভুল নয়, বরং তা মানুষকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করে এবং সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট করে। মূলত মানুষের সম্মানহানি শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজের জন্য ক্ষতিকর; তাই এর শাস্তি দুনিয়া ও আখিরাতে অবশ্যম্ভাবী।

মানুষকে অপমান করার শাস্তি আখিরাতের জবাবদিহিতে অত্যন্ত কঠিন হবে। আল্লাহ বলেন,“যে কেউ পরিমাণ পরমাণু পরিমাণ সৎকর্ম করে, সে তা দেখবে এবং যে কেউ পরিমাণ পরমাণু পরিমাণ মন্দকর্ম করে, সেও তা দেখবে।” (সূরা যিলযাল: ৭–৮)। অপমান করা যেহেতু একটি স্পষ্ট মন্দকর্ম, তাই এর প্রতিদানও অবধারিত। হাদিসে উল্লেখ আছে— কিয়ামতের দিন মানুষের অধিকাংশ আমল অপমান ও কটূক্তির কারণে নষ্ট হয়ে যাবে, কারণ এসবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা তাদের হক আদায় করে নেবে। রাসুল (সা.) বলেছেন-“মাফলিস কে জানো? মাফলিস সে ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন নামাজ, রোজা ও সাদকা নিয়ে আসবে; কিন্তু সে কারো গালি দিয়েছে, কারো মানহানি করেছে… ফলে তাদের হক হিসেবে তার সওয়াবগুলো নিয়ে নেওয়া হবে, শেষ হলে তাদের গুনাহগুলো তার উপর চাপিয়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।” (সহিহ মুসলিম)। এই বর্ণনা স্পষ্টভাবে দেখায় যে অপমান একটি অধিকারভঙ্গের অপরাধ, যার শাস্তি খুবই কঠোর।

হাদিসে মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শনকে ঈমানের অংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন— “মুসলমান সে ব্যক্তি, যার জবান ও হাত থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)। এখানে “জবান” বলতে কথাবার্তার মাধ্যমে কারো মনে আঘাত দেওয়াকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, অপমানমূলক কথা বলা ইসলাম থেকে দূরে থাকা নির্দেশ করে। একইভাবে, রাসুল (সা.) আরও বলেন— “কারো প্রতি ঈর্ষা করো না, কারো প্রতি ঘৃণা পোষো না, একে অপরের দিকে পিঠ ফিরিয়ে রেখো না। আল্লাহর বান্দারা তোমরা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও।” (সহিহ মুসলিম)। এ হাদিস স্পষ্ট করে যে মানুষের প্রতি বিরূপ আচরণ, বিদ্বেষ ও অপমান সমাজজীবনে মারাত্মক বিভেদ সৃষ্টি করে, যা ঈমানের পরিপন্থী।

মানুষের সম্মানহানি ইসলামী শরিয়ত শুধু নৈতিকভাবে নিন্দা করে না, বরং আইনগত শাস্তির কথাও বলে। কুরআনে বলা হয়েছে “যারা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, তারা একটি বড় ধরনের অপবাদ ও স্পষ্ট গুনাহ বহন করে।” (সূরা আল-আহযাব: ৫৮)। আল্লাহ এখানে দুইটি গুরুতর অপরাধের উল্লেখ করেছেন: অপবাদ এবং স্পষ্ট গোনাহ। অর্থাৎ মানুষকে অপমান করা শুধু সামাজিক অপরাধ নয়, বরং আল্লাহর কাছে একটি বড় পাপ, যার শাস্তি অশ্রুতপূর্ব।

হাদিসে আরও বলা হয়েছে— মানুষের সম্মানহানি করা এমনকি জাহেলিয়াতের বৈশিষ্ট্য। রাসুল (সা.) বলতেন “কারো প্রতি গালি দেওয়া ফাসিকতা।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)। ফাসিকের পরিণতি আল্লাহর শাস্তি ছাড়া আর কিছু নয়। এছাড়া হাদিসে গীবত করা, পরনিন্দা করা, অপবাদ দেয়া— এই সবকেই মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে “তোমাদের কেউ কি মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে পছন্দ করবে? নিশ্চয়ই তোমরা তা ঘৃণা করবে।” (সূরা আল-হুজুরাত: ১২)। এর দ্বারা বোঝায়, মানুষের সম্মানহানি ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোচ্চ স্তরের নিকৃষ্ট কাজ, যার শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।

মানুষকে অপমান করার শাস্তি শুধু আখিরাতেই সীমাবদ্ধ নয়, দুনিয়াতেও এর বিভিন্ন পরিণতি রয়েছে। যারা অন্যকে অপমান করে, সমাজে তারা সম্মান হারায়, শত্রু তৈরি করে, এমনকি তাদের কথায় আল্লাহর অসন্তুষ্টিও এসে পড়ে। হাদিসে বলা হয়েছে— “যে অন্যকে অপমান করে, আল্লাহ তাকে অপমানিত করেন।” (তিরমিজি)। এর দ্বারা বোঝায়, আল্লাহ মানুষের সম্মানহানিকে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য মনে করেন না। দুনিয়াতে মানুষের কাছে অপমানিত হওয়া এবং আখিরাতে আল্লাহর কঠোর শাস্তি এই দুটোই অপেক্ষা করে থাকে অপমানকারী ব্যক্তির জন্য।

সুতরাং দেখা যায়, ইসলাম মানুষের মর্যাদাকে সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছে। কারো প্রতি কটূক্তি করা, গালি দেওয়া, বিদ্রূপ করা, হেয় করা কিংবা অপমান করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কুরআন ও হাদিসে বারবার সতর্ক করা হয়েছে যে অপমান শুধু সামাজিক অপরাধ নয়, তা আল্লাহর অধিকারভঙ্গ এবং মানুষের হক নষ্ট করার শামিল। অপমানকারী ব্যক্তি যত ইবাদতই করুক, মানুষের হক থাকলে তার আমল নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। তাই ইসলামের সঠিক অনুসারী হতে হলে প্রথমেই জবানকে পরিশুদ্ধ রাখা, মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং কখনো কাউকে অপমান না করার শিক্ষাটি হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। মানুষকে সম্মান দিলে আল্লাহ সম্মান দান করেন; আর মানুষকে অপমান করলে আল্লাহ অপমানিত করেন— এটাই ইসলামের শিক্ষা।

Share this Post in Your Social Media

Comments are closed.

এই ধরনের আরও খবর
Copyright © 2025, সাপ্তাহিক দেশের চিত্র. All rights reserved.
Weekly Desher Chitra developed by LogoMyface