বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
সাইবেরিয়ার চিরতুষারে সংরক্ষিত ২ হাজার বছরেরও পুরনো এক নারীর দেহে উল্কি (ট্যাটু) খোদাইয়ের অসাধারণ নিদর্শন পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই শিল্পকর্ম এতটাই নিখুঁত ও জটিল যে আধুনিক পেশাদার উল্কিশিল্পীর জন্যও তা অনুকরণ করা কঠিন হবে।
পাজিরিক সংস্কৃতির উত্তরাধিকার
প্রাগৈতিহাসিক পাজিরিক সংস্কৃতির (Eurasian steppe-এর ঘোড়সওয়ার যাযাবর গোষ্ঠী) অন্তর্গত এই নারী মৃত্যুকালে প্রায় ৫০ বছর বয়সী ছিলেন। তার দেহ তুষারের নিচে চাপা পড়ে থাকায় চামড়া ও উল্কির নকশা টিকে গেছে। সাধারণ চোখে এগুলো দেখা না গেলেও নিকট-ইনফ্রারেড ফটোগ্রাফির মাধ্যমে উল্কিগুলো স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
তার ডান হাতের উল্কিতে দেখা যায়—দুটি ডোরা কাটা বাঘ, একটি চিতাবাঘ এবং দুটি শিংওয়ালা হরিণ শিকার দৃশ্যে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। নকশাটি হাতের পেশির গঠন অনুসরণ করে আঁকা, আর দৃষ্টিকোণের খেলায় শিল্পীর দক্ষতা স্পষ্ট।
এর বিপরীতে বাম হাতের উল্কি কিছুটা কম নিখুঁত—প্রাণীর শারীরিক গঠন তুলনামূলকভাবে কম সঠিক, রেখাগুলোও অপেক্ষাকৃত খসখসে। গবেষকদের ধারণা, এগুলো দুই ভিন্ন শিল্পীর কাজ—একজন অভিজ্ঞ ও অন্যজন অপেক্ষাকৃত অনভিজ্ঞ—অথবা একজন শিল্পীর কর্মজীবনের আলাদা সময়ের সৃষ্টি হতে পারে।
প্রাগৈতিহাসিক উল্কি কৌশল
গবেষক দল বলছে, উল্কিগুলো খোঁচা দিয়ে কালি ঢোকানোর (stick-and-poke) পদ্ধতিতে করা হয়েছে, যেখানে বহু-মুখী সূঁচের মতো যন্ত্র দিয়ে মোটা রেখা এবং একমুখী সূঁচ দিয়ে সূক্ষ্ম রেখা আঁকা হয়েছে। এই ধারণা আংশিকভাবে এসেছে সহ-গবেষক ও প্রাগৈতিহাসিক শিল্প বিশেষজ্ঞ ড্যানিয়েল রিডের স্ব-অভিজ্ঞতা থেকে—তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক যন্ত্রের প্রতিরূপ ব্যবহার করে নিজেকে উল্কি এঁকেছেন।
যদিও এখনো কোনো প্রাচীন উল্কি যন্ত্র প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে আবিষ্কৃত হয়নি, বিজ্ঞানীরা মনে করছেন এগুলো জৈব উপাদান (যেমন কাঁটার গোছা) দিয়ে তৈরি ছিল বলে সময়ের সাথে নষ্ট হয়ে গেছে।
গবেষক গিনো ক্যাসপারি বলেন, “এটি এক প্রতিভাবান শিল্পীর কাজের বিরল উদাহরণ এবং মানব ইতিহাসে উল্কিশিল্পের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের এক অমূল্য সংযোজন।”
সূত্র : Science News