বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
মানুষের মস্তিষ্ক অদৃশ্য এক ক্ষীণ আলো বিচ্ছুরণ করে—যা খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু বিজ্ঞানীরা বিশেষ যন্ত্র দিয়ে তা পরিমাপ করতে পারেন। কানাডার অন্টারিওর উইলফ্রিড লরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. নিরোশা মুরুগান ও তাঁর দল সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখেছেন, এই আলো আমাদের কার্যকলাপের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়।
সব জীবন্ত টিস্যুই ‘আল্ট্রাউইক ফোটন এমিশন’ (UPE) নামে এক ধরনের ক্ষীণ আলো ছড়ায়, যা টিস্যু মৃত্যুর পর নিভে যায়। তবে মস্তিষ্ক প্রচুর শক্তি খরচ করার কারণে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় বেশি UPE উৎপন্ন করে।
গবেষণায় ২০ জন প্রাপ্তবয়স্ককে অন্ধকার কক্ষে বসিয়ে তাঁদের মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক সংকেত এবং আলো বিচ্ছুরণ একসঙ্গে মাপা হয়। অংশগ্রহণকারীদের চোখ খোলা ও বন্ধ করা কিংবা শব্দ শোনার মতো সহজ কাজ করতে বলা হয়। ফলাফলে দেখা যায়, মস্তিষ্ক থেকে নির্গত আলোর ধরণ সরাসরি বৈদ্যুতিক কার্যকলাপের সঙ্গে সম্পর্কিত।
ড. মুরুগান জানান, এই আলোর প্যাটার্ন জটিল, ক্রমাগত পরিবর্তনশীল এবং তথ্য বহন করতে সক্ষম। মস্তিষ্কের এই ক্ষীণ আলো ধীর ছন্দে ওঠানামা করে—প্রতি সেকেন্ডে একবারেরও কম—এবং প্রতিটি কাজের সময় কিছুটা স্থিতিশীল হয়ে ওঠে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আলোর মাপ ভবিষ্যতে স্নায়ুবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। এটি ব্যবহার করে এপিলেপসি, ডিমেনশিয়া কিংবা বিষণ্নতার মতো অসুস্থতার প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে।
মুরুগান আরও বলেন, এটি শুধু মস্তিষ্কের কার্যকলাপের উপজাত নয়, বরং অভ্যন্তরীণ কার্যপ্রক্রিয়ায়ও ভূমিকা রাখতে পারে। এমনকি এই আলো কি আশেপাশের অন্য মস্তিষ্কেও প্রভাব ফেলতে পারে—সেটিও একদিন হয়তো প্রমাণিত হবে।
যদিও এই গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ের এবং ছোট আকারে পরিচালিত হয়েছে, তবুও এটি মস্তিষ্কের আলো নিয়ে নতুন প্রশ্ন ও আলোচনার জন্ম দিচ্ছে।
সূত্র: BBC Science Focus