লাইফস্টাইল ডেস্ক
অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (এএসডি) হলো এক ধরনের স্নায়ুবিক বিকাশজনিত অবস্থা, যার লক্ষণ সাধারণত শিশুর জীবনের প্রথম তিন বছরের মধ্যেই প্রকাশ পায়। ‘স্পেকট্রাম’ শব্দটি ইঙ্গিত করে যে এই অবস্থার ধরণ ও তীব্রতা ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে। ফলে প্রতিটি অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির আলাদা শক্তি, চ্যালেঞ্জ ও বৈশিষ্ট্য থাকে।
মনোবিজ্ঞানীরা যুক্তরাষ্ট্রের ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড স্ট্যাটিস্টিকাল ম্যানুয়াল অব মেন্টাল ডিসঅর্ডার্স (ডিএসএম-৫) অনুসারে অটিজমকে দুইটি প্রধান লক্ষণভিত্তিক শ্রেণিতে ভাগ করেছেন—
১. সামাজিক যোগাযোগ ও পারস্পরিক ক্রিয়ায় ঘাটতি।
২. সীমিত ও পুনরাবৃত্ত আচরণ, আগ্রহ বা কর্মকাণ্ড।
শিশুর বিকাশ পর্যায়ে এসব লক্ষণ দেখা দিলেই তা অটিজমের ইঙ্গিত হতে পারে, তবে সঠিক নির্ণয়ের জন্য যোগ্য চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অপরিহার্য। বর্তমানে অটিজম শনাক্তে কোনো রক্ত পরীক্ষা বা জেনেটিক পরীক্ষার নির্দিষ্ট পদ্ধতি নেই; বরং পর্যবেক্ষণ, অভিভাবকের সাক্ষাৎকার ও নানা ধরণের প্রশ্নপত্র ব্যবহার করা হয়।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে প্রতি ৫৪ জন শিশুর মধ্যে একজন অটিজমে আক্রান্ত। ছেলেদের মধ্যে এর হার তুলনামূলক বেশি হলেও এটি সব লিঙ্গ, জাতি ও সামাজিক স্তরের মানুষের মধ্যেই দেখা যায়।
অটিজমের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো অজানা। গবেষকরা মনে করেন, জেনেটিক, স্নায়ুবিক ও পরিবেশগত নানা উপাদানের যৌথ প্রভাব এর পেছনে কাজ করে। চিকিৎসা নেই, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ একজন অটিজম আক্রান্ত শিশুর সামাজিক ও শিক্ষাগত দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
অটিজমে আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, মৃগী রোগ, হজমজনিত সমস্যা বা ঘুমের অসুবিধার মতো সহ-অবস্থা (কমর্বিডিটি) নিয়ে ভোগেন। এসব সমস্যা দ্রুত শনাক্ত ও চিকিৎসা করলে তাদের জীবনমান উন্নত হয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অটিজম সম্পর্কে সঠিক ও বৈজ্ঞানিক ধারণা গড়ে তুলতে গণমাধ্যম ও সংস্কৃতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সিনেমা বা বইয়ের চরিত্রের বাইরে বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাই অটিজম বোঝার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায়।
সূত্র: Autism Research Institute, CDC, DSM-5