1. desherchitrabd@gmail.com : Desher DesherChitra : Desher Chitra
বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
নাশকতা আতঙ্কে জনজীবন: নিরাপত্তায় চাই কঠোরতা ও আস্থা সুপারফুড: স্বাস্থ্যরক্ষায় প্রকৃতির আশ্চর্য সম্পদ ডিএনএ বিশ্লেষণে প্রকাশ: হিটলারের গোপন জেনেটিক যৌন বিকলতা দিল্লির রেড ফোর্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: ১২ নিহত, সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে তদন্ত শুরু ‘বড় নাশকতার পরিকল্পনা’, সিলেটে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৫ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার গাজীপুরে পেট্রোল বোমাসহ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৩ নেতা আটক ঢাকা–সিলেট মহাসড়কে নাশকতার পরিকল্পনা, নবীগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই নেতা আটক দেশজুড়ে সহিংসতার জোয়ার: ১৮ স্থানে হামলা, ঢাকায় কড়ায়গণ্ডায় নিরাপত্তা শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার ইস্যুতে ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনারকে তলব, বাংলাদেশের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ সারাদেশে চাঁদাবাজি: বিএনপির প্রার্থী আজহারুল মান্নানের বিতর্কিত বক্তব্য

শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা: ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সতর্কবার্তা

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

সম্পাদক: মুহাম্মদ জাকির হোসাইন

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। একদিকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার অধিকার ও সুব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন করছেন, অন্যদিকে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামাজিক জটিলতা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মানসম্মত শিক্ষাজীবনকে প্রভাবিত করছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষ, ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা, রাজনৈতিক নেতা ও গ্রুপের হস্তক্ষেপ এবং প্রশাসনের অনিশ্চিত পদক্ষেপ শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশকে ক্রমেই অস্থিতিশীল করে তুলছে।

শিক্ষাঙ্গনের মূল লক্ষ্য হলো জ্ঞান, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের সমন্বয়ে এক সুস্থ ও জ্ঞানমুখী সমাজ গঠন করা। কিন্তু যখন শিক্ষার্থীরা রাজনৈতিক প্রভাব, মব আক্রমণ এবং প্রশাসনিক অব্যবস্থার শিকার হন, তখন শিক্ষাঙ্গনের মূল উদ্দেশ্য বিপন্ন হয়। শুধু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে নয়, সমাজের অন্যান্য অংশও এ অস্থিরতার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা একদিকে তাদের অধিকার রক্ষার চেষ্টা করছেন, অন্যদিকে অনিশ্চিত পরিস্থিতি তাদের সৃষ্টিশীলতা ও মনোবলকে হ্রাস করছে।

সাম্প্রতিক উদাহরণগুলো আমাদের সতর্কবার্তা দিচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের ওপর ধারালো অস্ত্র ও লাঠি দিয়ে আক্রমণ, এমনকি নারী শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক হেনস্থা ইঙ্গিত করছে যে শিক্ষাঙ্গনে সংরক্ষিত নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা বর্তমানে যথেষ্ট সুনিশ্চিত নয়। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও সন্ত্রাসের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে যে, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা এখন শুধু এক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় নয়, এটি সমগ্র শিক্ষাক্ষেত্রকে প্রভাবিত করছে।

অবশ্যই, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও মত প্রকাশ শিক্ষাঙ্গনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটা তাদের নাগরিক চেতনা, ন্যায্য দাবি ও সমাজের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু সমস্যার মূল বিষয় হলো, রাজনৈতিক দল ও ক্ষমতার খেলায় শিক্ষাঙ্গনকে ব্যবহার করা। ছাত্রলীগ, জাসাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শাখা শিক্ষার্থীরা প্রায়ই তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে শিক্ষাঙ্গনে হস্তক্ষেপ করে। এটি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে।

প্রশাসনের ভূমিকা এখানেও গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যখন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তখন শিক্ষাঙ্গন আরও অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। প্রশাসনিক অনিশ্চয়তা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে ভয়, অনিশ্চয়তা এবং হতাশা সৃষ্টি করে। এটি শুধু শিক্ষাঙ্গনের নয়, সমাজের জন্যও ক্ষতিকর। একজন শিক্ষার্থী যখন তার নিরাপত্তা ও অধিকার নিয়ে অনিশ্চয়তায় থাকে, তখন তার সৃজনশীলতা, শিক্ষা অর্জনের আগ্রহ ও সামাজিক সচেতনতা বাধাপ্রাপ্ত হয়।

শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতার আরেকটি কারণ হলো সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মানদণ্ডের ব্যর্থতা। শিক্ষক, অভিভাবক ও সমাজের অন্যান্য অংশ শিক্ষার্থীদের উপর সমর্থন ও সুরক্ষা প্রদানে আরও সচেতন হতে হবে। শিক্ষার্থীরা নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্বাধীন পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারলে তারা সমাজের দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে ওঠে। তবে, বর্তমানে শিক্ষাঙ্গনে হামলা, হেনস্থা ও মব-সন্ত্রাসের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীরা ক্রমশ ভয়ভীতি ও মানসিক চাপের মধ্যে শিক্ষাজীবন চালাচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে সমাধানের পথ হলো শিক্ষাঙ্গনকে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করা জরুরি। প্রশাসন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ সকলকে একত্রে কাজ করতে হবে যাতে শিক্ষাঙ্গন সত্যিকার অর্থে শিক্ষার কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোকে শিক্ষাঙ্গনে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ও সৃজনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

অবশেষে, শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা শুধুমাত্র শিক্ষার্থীর নয়, পুরো জাতির জন্য হুমকি। যদি আজকের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ও স্বচ্ছ শিক্ষাজীবন থেকে বঞ্চিত হন, তবে আগামী প্রজন্মও তার নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারবে না। তাই শিক্ষাঙ্গনকে অস্থিরতা থেকে মুক্ত রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার—শিক্ষক, প্রশাসন, অভিভাবক, রাজনৈতিক দল ও সমাজকে মিলিতভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। শিক্ষাঙ্গন শান্তিপূর্ণ, সৃজনশীল ও নিরাপদ হলে সমাজও প্রগতিশীল ও স্থিতিশীল হবে।

শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা শুধু এক দিনের ঘটনা নয়; এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জ্ঞান ও মূল্যবোধের উপর প্রভাব ফেলে। তাই শিক্ষাঙ্গনকে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও স্বাধীন রাখার জন্য সবার সচেতনতা, দায়িত্বশীলতা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। এটি না হলে শিক্ষার মূল লক্ষ্য পূর্ণ হবে না, এবং আমাদের জাতির ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে যাবে।

Share this Post in Your Social Media

Comments are closed.

এই ধরনের আরও খবর
Copyright © 2025, সাপ্তাহিক দেশের চিত্র. All rights reserved.
Weekly Desher Chitra developed by LogoMyface